ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

করোনাকালে তরুণদের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

নূর মোহাম্মদ রানা
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাস এক মহাতঙ্কের নাম। এ এক অদৃশ্য আততায়ী। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও। সারা বিশ্বে একদিনে আক্রান্ত হয়েছে দেড় লাখের কাছাকাছি মানুষ, এমন নজিরও আছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গেছে প্রায় ১ লাখের উপরে। মৃত্যুর তালিকায় এর পরই আছে যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল।

অনেক দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় এবং কোনো কোনো দেশে হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবের মধ্যে না আনায় করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রতিবছর ম্যালেরিয়ায় বিশ্বে যত মানুষ মারা যায়, করোনাভাইরাসে ৫ মাসে এর সমান প্রাণহানি ঘটল। যা সত্যিই বিস্ময়কর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় গত ১০ জানুয়ারি চীনের উহানে, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর উহানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ইউরোপ আমেরিকার মতো দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে। আর আক্রান্তের দিক দিয়ে ভারতের পরপর বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে। আমাদের দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিনদিন সংক্রমণের হার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, এই রোগ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে অবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা যেহেতু এখনো আবিষ্কার হয়েনি, তাই এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত গাইডলাইন অনুসরণ করে চলতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মাস্ক পরা, কমপক্ষে তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে।

দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও গণমাধ্যমে একই বিষয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। বলছেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোতে। প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরার কথা বলছেন তারা। কিন্ত নগরীর রাজপথে ও ঘোরাঘুরির স্পটগুলো দেখলে যে কারও মনে হবে, এসব পরামর্শ তোয়াক্কা করছেন না বেশিরভাগ মানুষই। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কোনো সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। আরও একটি ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছে না। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছে না। শরীর ঘেঁষে চলাফেরা করছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। যেন দেশে কোনো মহামারিই আসেনি। এর ফলে বিপদ ডেকে আনছে তারা। সামাজিক দূরত্ব বলতে যা বোঝায় তা বেশিরভাগ মানুষই মানছে না। ফলে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে অনেকের মৃত্যুবরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, দেশটিতে তরুণ প্রজন্মের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। সেখানে ফোরিডা, সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও টেক্সাসসহ আরো কিছু অঙ্গরাজ্যে তরুণদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের বেশি হারে আক্রান্ত হওয়াকে এখন বিশ্বব্যাপী বিশেষ উদ্বেগের সাথে দেখা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ অর্থাৎ সংক্রমণ কমে আসার পর আবার ঊর্ধ্বগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারেন কিনা সেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও অপোকৃত কমবয়সীরা করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আইইডিসিআরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনায় এ পর্যন্ত শনাক্ত ব্যক্তির ৫০ শতাংশেরই বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর।

মনে রাখতে হবে, তারুণ্য এক প্রত্যয়, চেতনার উৎস, অনুপ্রেরণার অজেয় শক্তি। যারা নিজ প্রতিভায়, উদ্যমে, কর্মযজ্ঞে বদলে দেয় পৃথিবী তারাই তো চিরনবীন। তাদের নিয়েই তো কবিরা রচনা করেছেন দ্রোহের-বিপ্লবের হাজারো গান-কবিতা, যা মর্মে মর্মে জাগায় জয়ের প্রতিধ্বনি। সেই তরুণ প্রজন্মের কাছে নীতি, নৈতিকতা, আদব, শিষ্ঠাচার ও লাজলজ্জা পরিহারের যে হিড়িক পড়েছে তা ভবিষ্যতে মহামারি আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। যে তরুণ প্রজন্ম পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য সম্পদে পরিণত হওয়ার কথা, সততার সাথে পবিত্র জীবনযাপনের মাধ্যমে নীতি নৈতিকতাকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করার কথা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় উন্নতিকল্পে যেখানে তরুণের মেধাকে ব্যবহারের কথা, নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে নিজকে দেশের জন্য, দেশকে বিশ্বের জন্য অপরিহার্য সম্পদে পরিণত করার কথা, সেখানে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সম্পূর্ণ তার বিপরীত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) অনেক আগে তরুণদের সতর্ক করেছিলো। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস বলেছিলেন, যদিও বয়সী মানুষদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে, তবুও তরুণদের প্রতি আমি বলব, আপনারাও ঝুঁকিমুক্ত নন। এই ভাইরাস আপনাকেও হাসপাতালে পাঠাতে পারে, আপনাকে দুর্বল করে তুলতে পারে, এমনকি মৃত্যু ঘটাতে পারে। এমনকি আক্রান্ত হয়ে কোনো তরুণ অসুস্থ না হলেও তার বিচরণে ঝুঁকিতে থাকা কারও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কার কথাও জানান গ্যাব্রিয়েসাস। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়সীদের মৃতের হার বেশি হলেও ঝুঁকি সব বয়সীদেরই। আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তরুণরা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন না। কারণ তারা দেখছেন, আক্রান্ত হলেও তাদের উপসর্গগুলো গুরুতর নয়। অনেক সময় তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। তারা দেখছে, মূলত বয়স্করাই বেশি মারা যাচ্ছেন। তাই করোনাকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছেন। এর ফল হলো তরুণরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কম। তারা যে অন্যদের জন্য ঝুঁকির কারণ সে বিষয়ে আলাদা করে কোনো প্রচারণা না থাকায় সংক্রমণ রোধে নিজেদের দায়িত্বটুকু তারা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, রাস্তায় নামলে দেখা যায়, অনেক তরুণ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আড্ডা দিচ্ছেন। কারো মুখে হয়ত মাস্ক আছে, কারো নেই। কেউ আবার মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা বাইরে বের হন বেশি, তাদের মধ্যে রেকলেস হওয়ার প্রবণতাও বেশি। তারা বাড়ি গিয়ে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়দের সংক্রমিত করছেন। পরিবারে আগে থেকে কারো হার্ট, কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও বড় ঝুঁকিতে ফেলছেন।

তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে, করোনাভাইরাস মানুষের জীবনযাপনকে বদলে দিয়েছে। মানুষ আগের চেয়ে সুশৃঙ্খল ও সতর্ক হয়েছে। জীবনযাপনে এসেছে পরিমিতিবোধ। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে ভীতিও সঞ্চার করেছে। কে কখন আক্রান্ত হয়, কে কখন মারা যায় সে ভয় সবার মধ্যে কাজ করছে। যতই দিন যাচ্ছে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যারা ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে তারাও যেমন ভয় পাচ্ছে, আর যারা জরুরি কাজে বাইরে আসছে তাদের ভয়টা আরো বেশি। কারণ তারা যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতভাগ। ফলে মানুষের মনোজগতে বিষাদ কাজ করছে। মানুষ নিজেকে নিয়ে মৃত্যুকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এত ভাবেনি কখনো। যেন ভাবনা আর মন খারাপ থাকার মৌসুম শুরু হয়েছে।

পরিবারের শিশুরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাই এই বিষয়ে সবার আগে বুঝতে হবে তরুণসমাজকে। তাদের মধ্যে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজে সংক্রমিত হয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যেন ঝুঁকিতে না ফেলি। প্রতিটি কর্মকাণ্ড ঝুঁকিমুক্ত থেকে করতে হবে। তরুণদের যাবতীয় ইতিবাচক কর্মকাণ্ডকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সাম্প্রতিক করোনা-ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে হবে। হতে হবে সচেতন। তারা নিজেরা যেন বিপদে না পড়ে এবং অন্যকে যেন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে। এভাবেই সচেতনতাবোধ তৈরির মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্মই রুখতে পারে করোনাভাইরাসের বিস্তার।

লেখক: নূর মোহাম্মদ রানা, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।”

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print