ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

উৎসব আর বিক্ষোভে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ বছরপূর্তি পালিত

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

rangamati-hdc-pic-2-12-16-05
.

একদিকে উৎসব অন্যদিকে চুক্তি বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে পালিত হয়েছে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৯ বছরপূর্তি। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ এসব পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে সরকারিভাবে পালন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষপূর্তির উৎসব। এছাড়া শান্তিচুক্তিকে ‘কালো চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের দাবি জানায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ। তারা শান্তিচুক্তির প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে শহরে। জনসংহতি সমিতির সমাবেশ থেকে শান্তিচুক্তির পূর্ণবাস্তবায়নের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত ১০ দফাভিত্তিক কর্মসূচি দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তারা ভূমি কমিশন, আঞ্চলিক ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর, অপারেশন উত্তোরণসহ সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, উপজাতীয় শরনার্থী পুনর্বাসহ অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবির জবাবে দীপংকর তালুকদারের ক্যাডরদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিও জানিয়েছেন।

পার্বত্য চুক্তির ১৯ বছরপূর্তি উপলক্ষে সকালে শহরের জিমনেসিয়াম চত্ত্বরে গণসমাবেশের আয়োজন করে জনসংহতি সমিতি। সমাবেশ শেষে শহরের প্রধান সড়কে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সুবর্ন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় নেতা পাহাড়ী ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।

rangamati-hdc-pic-2-12-16-02
.

এছাড়া জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, যুব সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুণ ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি অন্তীক চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল খীসা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানকার মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায়। জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীসহ সাধারণ জুম্ম জনগণের ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে চরম হয়রানি, নির্যাতন, দমনপীড়ন চালাচ্ছে শাসকগোষ্টী। তারা প্রতিনিয়ত জুম্মদের ওপর ধর-পাকড়, জেল-জুলুম, হামলা, মামলা, অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে দখল করা হচ্ছে জুম্ম জনগণের ভিটেমাটি।

তিনি বলেন, আমরা এত বছর ধরে ধৈর্য্য-সহ্য নিয়ে অপেক্ষা করছি। এখনও অপেক্ষায় আছি। শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আশা করি তিনি দ্রুত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করবেন। অন্যথায় জনসংহতি সমিতিরি নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে পাহাড়ের জুম্ম জনগণ। জুম্ম জাতি দীর্ঘ দুই যুগ আন্দোলন করে চুক্তি করেছে। এজন্য অনেক রক্ত দিতে হয়েছে তাদেরকে। তাই জুম্ম জাতিকে কখনও অবহেলা করা যাবে না।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে আন্দোলন ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি সরকারকে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানান।

ন্যাপ কেন্দ্রীয় নেতা পাহাড়ী ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকার যতই পার্বত্য চুক্তির বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি করুক, কিন্তু বাস্তবে ৭২ ধারার মধ্যে কেবল ২৫টির বাস্তবায়িত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মৌলিক কোনো ধারাই নেই। চুক্তি বাস্তবায়নে যতই কালক্ষেপন হচ্ছে ততই পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যা বাড়ছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপনের কারণে ক্ষোভ বাড়লে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্নতার পথে যেতে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, সেনাশাসন বলবৎ রাখলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা আরও জটিল আকারে বেড়ে যাবে। অবিলম্বে সেনাশাসন তুলে নিয়ে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার দাবি উল্লেখ করে জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা বলেন, আমরাও চাই অচিরেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। দীপংক তালুকদারের বাসভবন এখন তাদের অস্ত্রাগার। তাদের কাছ থেকে অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে হবে। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯ বছরপূর্তিতে সকালে শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, বিকালে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেরাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

শান্তির পায়রা উড়িয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সানাউল হক, সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিদোয়ান, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ উল্লাহ, জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ, সবির কুমার চাকমা, রেমলিয়ানা পাংখোয়া, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা ও  রাঙ্গামাটি পৌরসভা মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী।

দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়নাধীন। পুরোপুরি বাস্তবায়নে সরকারকে সময় দিতে হবে। গালিগালাজ, অসহযোগ আন্দোলন করে কখনও চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র যতদিন উদ্ধার করা হবে না ততদিন এই পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তি চলতেই থাকবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

বিকাল ৩টায় রাঙ্গামাটি চিংহ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবিতে শহরের কাঠালতলী হতে একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সংগঠনটির কাঠালতলীর অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে অবিলম্বে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাব্বির আহমেদ ও জেলা শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহীমসহ অন্যরা।

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print