
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তুলার গুদামে লাগা আগুন টানা ১৩ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে নির্বাপণে ব্যর্থ হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। পরে রাত ১১টা থেকে আগুন নির্বাপণে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ৪টি ইউনিট। একই সাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফায়ার ফাইটিং টিমকে দুর্ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় এই রিপোর্ট খেলা পর্যন্ত সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল।
এদিকে তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
আরও খবর : সীতাকুণ্ডের কুমিরায় তুলার গুদামে আগুন
চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারকে সদস্য সচিব করে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য রাখা হয়েছে- শিল্প পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন (বিটিএমসি), বিস্ফোরক পরিদফতর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএম) একজন করে প্রতিনিধি এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)কে।
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, এই তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কুমিরার ইউনিটেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২৭০০ টন তুলা গুদামে মজুদ ছিল ওই গুদামে। তুলা দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন নেভানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। রাতে সেনাবাহিনীর চারটি ইউনিট কাজ করছে। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফায়ার ফাইটিং টিমকে দুর্ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরায় নেমসন কনটেইনার ডিপোর সামনে একটি তুলার গুদামে আগুন লাগে। এস এল শিল্পগ্রুপের মালিকানাধীন ‘ইউনিটেক্স’ কারখানা ব্যক্তি মালিকানাধীন গুদামটি ভাড়ায় নিয়ে তুলা রেখেছিল বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
আরও খবর : পানি সংকট: সীতাকুণ্ডে তুলার গোডাউনে আগুন ৯ ঘন্টাও নিয়ন্ত্রণে আসেনি
আগুন লাগার পর থেকে দিনভর চেষ্টা চালায় কুমিরা, সীতাকুণ্ড ও নগরীর আগ্রবাদসহ কয়েকটি স্টেশনের অন্তত ১১টি ইউনিট। দুপুরের দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনার কথা জানালেও পরে পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়।

শনিবার সন্ধ্যায় কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেছিলেন, দীর্ঘ ৯ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়নি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসলেও বড় ধরণের আগুন ছড়ানোর সম্ভব না নেই। পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরে রাত ১০টা পর্যন্তও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেনা ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয় প্রশাসন থেকে।
এর পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে নৌবাহিনীর টিমও যোগ দেয়।
এর আগে রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস সিনিয়র কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, এখনো কুমিরা সীতাকুণ্ড, নগরীর আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্টেশনের ১১টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ চালিয়েছে। গুদামটিতে তুলার বড় বড় গাইড থাকায় আগুন সহজে নির্বাপণ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে আশে পাশের যত পুকুর ছিল সব গুলো পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা পানি সংকটে পড়েছি। দূর গ্রাম থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয়রা জানান, এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের মালিকানাধীন গুদামটি ইউনিটেক্স লিমিটেড ভাড়া নেয়। তাঁদের নিজস্ব সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে অনেক তুলা মজুত করা হয়। সকালে টিন সেট ওই গুদামে ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে কাজ করার সময় হঠাৎ আগুন লেগে যায়।