
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ফাঁসির দণ্ডিত আসামি রাখাল চন্দ্র নাহা (৭০) মুক্তি পেয়েছেন। আজ রবিবার (২ জুলাই) বিকেলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দেবীদ্বারের হোসেনপুরে ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় দেন আদালত। জেঠাতো বোনের জামাই দীনেশ চন্দ্র নাহাকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে দীনেশ চন্দ্রের পরিবার।
১৯৯৯ সালের ওই মামলায় ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন দেবিদ্বার হোসেনপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহা। তিনি ওই গ্রামের অক্ষয় চন্দ্র নাহার ছেলে। ওই হত্যার ঘটনার দিন তিনি বাড়ি ছিলেন না। হতদ্ররিদ্র মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহাকে ২০০৩ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্তও হয়। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসীর দন্ডাদেশ রাত ১১ টায় কার্যকর করার মাত্র দেড়ঘন্টা পূর্বে কারাকর্তৃপক্ষ ফাঁসীর দন্ডাদেশ মৌকুফের ওয়ার্লেস বার্তা পান।
এর আগে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী রাষ্ট্রপতি বরাবরে তার ফাঁসির রায় মওকুফের আবেদন করেন, পরে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ফাঁসি মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
জানতে চাইলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জমি জমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে জেঠাতো বোনের স্বামী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে খুনের অভিযোগে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার হোসেনপুর গ্রামের মৃত অক্ষয় চন্দ্র নাহার ছেলে বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা বন্দি অবস্থায় কারাগারে আসেন। তার (কয়েদি বন্দি নং- ৪১৮৯/এ) যার মামলা নম্বর এস টি- ২৩৪/০১, জিআর-২২/৯৯, দেবীদ্ধার থানার মামলা নম্বর- ১০, তারিখ-২৬/২/১৯৯৯, ধারা- ৩০২ দঃ বিঃ ধারায় কারাগারে আসেন- গত ১৯৯৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী। তার মৃত্যুদণ্ড সাজা হয়-২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারী। পরে সাজার আদেশ মৃত্যুদণ্ড থেকে সংশোধিত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় গত ২০০৮ সালের ৩০ জুন। তার অর্জিত রেয়াত ৫ বছর ৭ মাস ২ দিন।
তিনি আরো জানান, বন্দির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর পরবর্তীতে গত ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল রাত ১১ টায় তার মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করার কথা ছিল। ওইদিন ফাঁসীর দন্ডাদেশ কার্যকর করার মাত্র দেড়ঘন্টা পূর্বে রাত সাড়ে ৯টায় তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের সুপারিশে যারা দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের ষড়যন্ত্রমামলায় জড়িয়ে ফাঁসী হতে পারেনা। সেই মর্মে তৎকালীন রাস্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনের নিকট আবেদন করলে রাস্ট্রপতি কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে মওকুফের বিষযটি ফাঁসীর দন্ডাদেশ কার্যকর করার মাত্র দেড়ঘন্টা পূর্বে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের নিকট ওয়ার্লেস বার্তাটি এসে পৌঁছলে মৃত্যুদন্ডাদেশ রহিত করা হয়। এরপর ওই রাস্ট্রপতি কর্তৃ স্বাক্ষরিত মৃত্যু-দন্ডাদেশের চিঠিটি ২০০৮ সালের ২৫ জুন কারাকর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছে। ওই চিঠিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মৃত্যুদন্ড হ্রাস পূর্বক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বলে তিনি জানান।