
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ’র ব্যর্থতার কারণে নগরজুড়ে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জনদুর্নভোগে পড়েছে নগরবাসী। তাই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চসিক মেয়র ও সিডিএর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) এক বিবৃতিতে মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নগরবাসী জলাবদ্ধতায় কষ্ট পাচ্ছে।
কারণ জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পসহ দুইটি প্রকল্প চলমান আছে সিডিএ’র। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প দুটি’র কাজ শেষ না করে ব্যর্থ হয়েছে সিডিএ। আবার সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘ ৯ বছরেও বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত একটি নতুন খাল খনন কাজ শেষ করতে পারেনি। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ীও এ সংস্থাটি ঠিকমত নালা নর্দমা পরিষ্কার করেনি। তাই মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, জলাবদ্ধতায় যখন মানুষ সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে তখন সিডিএ-চসিক পরষ্পরকে দোষারোপ করছে। এটা তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা। একইসঙ্গে ৭০ লক্ষ জনগণের সাথে মশকরা করার শামিল। সিডিএ সিটি কর্পোরেশন পরষ্পরকে দোষারোপ করায় স্পষ্ট হয়, তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। তাই ব্যর্থতা স্বীকার করে সিটি মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের উচিত পদত্যাগ করা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মাত্র কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানি, এমনকি গলা পানিতে ডুবে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর ফ্লাইওভারগুলোও পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। মূলত সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ সহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণেই এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম এখন বসবাসের অযোগ্য নগরী হয়ে উঠেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সমন্বয়হীনতার কারণে ক্রমান্বয়ে চট্টগ্রাম নগরী ভারসাম্যহীন হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামে জলবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলবদ্ধতা প্রকল্পের জন্য পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকার কাজ শুরু করেছিল। ২০২০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলেও উল্টো পুনর্মূল্যায়ন করে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এই সময়ে এসে বিপুল টাকা খরচ হলেও চট্টগ্রামবাসী এই প্রকল্পের কোন সুফল পায়নি। বরং জলবদ্ধতা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে এসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আরো দুর্ভোগ তৈরি করছে। এই অবস্থার জন্য সিডিএ ও সিটি করপোরেশন পরস্পরকে দায়ী করছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি সমর্থিত মেয়র মনজুর আলমের চেষ্টায় একনেকে পাশ করিয়ে বহদ্দারহাট থেকে বলিরহাট পর্যন্ত নতুন খাল খনন কাজ শুরু করেন। তখন এই প্রকল্পের বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২৮৯ কোটি টাকা। এরপর মেয়র থাকলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তার মেয়াদ শেষে প্রশাসক হলেন খোরশেদ আলম সুজন। বর্তমান মেয়রেরও আড়াই বছর পার হচ্ছে। কিন্তু বার শত কোটি টাকা খরচ করে ৯ বছরে একটি খালের কাজও শেষ করতে পারেনি চসিক।
বিএনপি বলেন, সিটি করপোরেশন ঠিকমতো নালা নর্দমাগুলো পরিষ্কার করছে না।তারা নতুন কোন খাল খনন করতে পারেনি। এ কারণে নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা বেশি হচ্ছে। এখন আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিতে বছরে অন্তত ১০ বার নগরী পানিতে ডুবেছে। খালগুলোর মুখে জলকপাট এখনো চালু করতে পারেনি। আবার সংস্থাগুলো যে যার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। এর খেসারত দিচ্ছেন নগরবাসী। অসহায় পানি বন্দি নগরবাসী ঠিকমতো খেতে পারছে না। অমানবিকভাবে দিন পার করছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে এখনও কোনো স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। কমবেশি ৭০ লাখ নগরবাসীর মলমূত্র গিয়ে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে মাস্টারপ্ল্যান উপেক্ষা করে নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। শহরের প্রধান সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণ ছিল মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। শহরের কেন্দ্রস্থলে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। দখল হয়ে গেছে অনেক খাল, ছড়া ও নালা নর্দমা। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় নগরী। রাস্তাঘাট অপ্রতুল, সংকট রয়েছে গণপরিবহনেরও। সিটি করপোরেশন রাস্তা সংস্কারের পরই তা কেটে ফেলছে ওয়াসা কিংবা পিডিবি। মূলত সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নগরীর ৫৬টি খাল দখল করে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকার এবং চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ নেই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির কারণে আজ নগরীর এই বেহাল দশা। এই সরকারের মন্ত্রী এমপিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা আজ জনগণের পাশে নেই। তারা আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্নীতি ও লুটপাটে ব্যস্ত। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নয় বলেই, জনগণের কল্যাণে এই সরকার কোন কাজ করছে না। মহামারী ডেঙ্গু মোকাবেলায় এবং ডেঙ্গু রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।ব্যর্থতার কারনে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারন করেছে। সরকারি হাসপাতালের মেঝেতেও মানুষের ঠাঁই হচ্ছে না। ডেঙ্গু চিকিৎসায় মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোনো কাজেই সফল হতে পারেন নি। মেয়রের ব্যর্থতার কারণে চট্টগ্রামে যে মেয়র আছে এটাও দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া সহ যে হারে মশার উৎপাত বেড়েছে তাতে নগরবাসী আতঙ্কিত। মশার উপদ্রবে মানুষ ঘরে টিকতে পারছে না। যেহেতু মেয়র জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি তাই নগরবাসীর প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতাও নেই। তাই ব্যর্থতার দায় নিয়ে চসিক মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত।
নেতৃবৃন্দ ডেঙ্গু মোকাবেলায় ক্লোরিং সলিউশন স্প্রে ব্যবহার করে নগরবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের বাসাবাড়ী ও আশেপাশের এলাকা নিজেদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আহবান জানান।