পঞ্চগড়ে রাতের আঁধারে কাভার্ড ভ্যানে প্রক্রিয়াজাতকরণ বস্তাভর্তি ১২ হাজার ৫০০ কেজি ওজনের চা আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (কাস্টমস) কর্মকর্তারা। অভিযোগ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কালোবাজারে পাচার করা হচ্ছিল এসব চা। বিষয়টি অধিকতর তদন্তে চাসহ গাড়িটি জব্দ করে থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ জুলাই) রাতে পঞ্চগড় সদরের অমরখানা ইউনিয়নের বোর্ড অফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানটিকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, রাতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে জাতীয় মহাসড়ক ধরে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছিল হিনো ট্রেডার্স নামে একটি কাভার্ড ভ্যান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোর্ড অফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানটির গতিরোধ করে অভিযান চালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ সময় প্রায় ২০ লাখ টাকার ১২ হাজার ৫০০ কেজির ২৫০ বস্তা চা আটক করা হয়।
এসব চা তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানায় তৈরি। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় স্থানীয়রা। এদিকে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় নেয়ায় নানা অভিযোগ উঠে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছুটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা।
এর আগেও একাধিকবার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার চা জব্দ করেছ কাস্টমসসহ চা বোর্ড। সর্বশেষ গত ২৯ মে ৪৯৭ কেজি বস্তাভর্তি চা কালোবাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পরে। এরপর ১১ জুলাই চা বোর্ডের চেয়ারম্যান শুনানি করলে কারখানাটির মালিক ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকা দেয়ায় মালিক শেখ ফরিদকে জরিমানায় ছেড়ে দেয়া হয়।
এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা মালিকরা এভাবে রাতে ভালো মানের চা কালোবাজারে পাচার করে দেয়। এতে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সঙ্গে এর কারণে তারা খারাপ চা অকশনে তুলে লোকসান দেখিয়ে সিন্ডিকেট করছে। এ বিষয়ে ধরা পরা এই কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা না, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের অনুমোদন বাতিল করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মোকলেছুর রহমান বলেন, এই কারখানা এর আগেও কালোবাজারি করতে গিয়ে ধরা পরেছে। তাদের এই কালোবাজারির কারণে শুধু আমাদের চা চাষিরাই নয়, সরকারও রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। আমরা জানি কাস্টমসের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো গাড়ি যেতে পারবে না। কিন্তু দিনের পর দিন তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। তাই মনে করছি কাস্টমসের দুর্বলতা রয়েছে। তারা অসাধু উপায় অবলম্বন করে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে।
অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, আজকে এসব চা কারখানার জন্য আমাদের চাষিদের অবস্থা খুব নাজুক। সরকারি টেক্স ফাঁকি দিয়ে মালগুলো যাচ্ছে, অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে বলে আমি বুঝি। না হলে রাস্তাঘাটে কাস্টমস টোল তুলছে কেন? তারা গাড়ি আটক করে থানা বা অফিসে নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে, যেহেতু ছাড়পত্র ছাড়া বের হয়েছে। কিন্তু তা না করে কাস্টমস ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটক করে কী করে। আমরা এমন অপরাধে জড়িত থাকা কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন পঞ্চগড়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনে রাসেল বলেন, কালোবাজারে চা পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাভার্ড ভ্যানটি আটক করা হয়েছে। এ সময় প্রয়োজনীয় নথিতে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকায় সন্দেহমূলকভাবে চাসহ কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করে পুলিশি হেফাজতে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, কয়েক মাস আগেও এই চা কারখানার অবৈধ চা আটক করা হয়। গত ১১ জুলাই চা বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই তার অপরাধের শুনানি করেছেন। এ সময় কারখানার মালিক শেষবারের মতো ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। তাই তাকে সতর্ক করতে চেয়ারম্যান শুধু জরিমানা করেন। তবে আবারও একই অপরাধের অভিযোগে কারখানাটির মাল আটক হয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে এই কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা ধারণা করছি, এটা কালোবাজারে যাচ্ছিল।
এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও জব্দকৃত চা নিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রয়েছে বলে জানান কারখানার মালিক শেখ ফরিদ।