বৈধ ইন্টারনেট সেবায় বাধার সৃষ্টি করে মিথ্যাচার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ২৫ ও ২৭ ধারায় পলকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সোহাগ মল্লিক নামে এক ব্যক্তি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে একাধিকবার দেশব্যাপী মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এরমধ্যে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এতে টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। যারমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন।
এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা ১৩ দিন বন্ধ ছিল উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার বিষয়ে আসামি গত ১৮ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানান, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।’ এর ছয় দিন পর গত ২৪ আগস্ট আসামি অগ্নিকাণ্ডে ডাটা সেন্টার ও ইন্টারনেট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেবা বিঘ্নিত হয়েছে বলে জানান।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তী ২৭ জুলাই আসামি জুনাইদ আহমেদ পলক আবারও বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানান, ‘সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।’ এরপর ২ আগস্ট আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে ব্যর্থতা ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাহতের দায়ভার নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। সবশেষ ৫ আগস্ট আসামির নির্দেশে আবারও কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়।
অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন, দেশব্যাপী মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণ এবং সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশক্রমে গত ১৩ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫-১৬ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট, ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং ৫ আগস্ট তারিখে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতিরেকে মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মৌখিক নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় সম্পন্ন করা হয়।
এ ছাড়া ১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এবং ৫ আগস্ট মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও চালুর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) নির্দেশনায় করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে ডাটা সেন্টারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত করে প্ররোচনার মাধ্যমে জুনাইদ আহমেদ পলক জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।