পাহাড়ে লাগাতার ধস আর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় থেকে সমতল। একটানা ভারী বৃষ্টিতে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। ডুয়ার্সের মাল, ক্রান্তি থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে খরস্রোতা তিস্তা। মাল্লিতে তিস্তা নদীর জল গ্রাস করেছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সিকিমের জাতীয় সংযোগ সড়ক ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক৷ তিস্তা বাজারেও একই পরিস্থিতি৷ তিস্তা, জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রের খবর, সাম্প্রতিককালে সেপ্টেম্বর মাসে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে গাজোলডোবা, নাগরাকাটাতে৷ জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজোলডোবাতে ২৫৩ মিলিমিটার, নাগরকাটাতে ২৬৫.৪ মিলিমিটার, ডায়নাতে ২২১.৮ মিলিমিটার, মুর্তিতে ২৩১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে তিস্তা নদীর দোমহনি থেকে মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দপ্তর। পাশাপাশি জলঢাকা নদীর মাথাভাঙা পর্যন্ত অসংরক্ষিত লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দপ্তরের নর্থ-ইস্ট বিভাগ। পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরে সিকিম ও ভুটান থেকে নেমে আসা নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। ফলে বাড়ছে ফ্লাশ ফ্লাডের আশঙ্কা। পরিস্থিতির সামাল দিতে ও ব্যারেজের ওপর চাপ কমাতে তিস্তা নদীর গাজোলডোবা ব্যারেজ থেকে দফায় দফায় পানি ছাড়ছে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ৷
পশ্চিমবঙ্গ সেচ দপ্তর সূত্রে জানতে পারে, শুক্রবার রাত-দিনভর গজলডোবা ব্যারেজ থেকে বাংলাদেশের দিকে গড়ে প্রায় এক লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়। তবে রাত ৮টায় সেই পরিমাণ বহু গুণে বেড়ে যায়। পানি ছাড়া হয় প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার ৩৮০ কিউসেক। রাত নটায় কিছুটা কমে পানি ছাড়া হয় ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৯ কিউসেক। এরপর রাতের দিকে কিছুটা কমে পানি ছাড়ার পরিমাণ। গড়ে পানি ছাড়া হয় এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৮ কিউসেক।
শনিবার সকাল থেকে অবশ্য পানি ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমতে থাকে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত গড়ে পানি ছাড়া হয় ১ লাখ ২৮ হাজার কিউসেক। কিন্তু সকাল দশটার পর থেকে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে পানি ছাড়া হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৩ কিউসেক। এরপর সকাল ১১টায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪১ কিউসেক। বেলা ১২ টায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ২১ কিউসেক এবং বেলা ১টায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪৮ কিউসেক। দুপুর ২ টায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৫৭ কিউসেক এবং বিকেল ৩টায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৪০ কিউসেক পানি ছাড়া হয়।
রাতারাতি নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে ওঠায় তিস্তার ভারতীয় অংশে প্রশাসনের তরফে শুক্রবার রাত থেকেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে আসার আবেদনও জানানো হয়।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্রবার রাতেই পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলা জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী ও সদর বিডিও মিহির কর্মকার-সহ অন্যান্য আধিকারিক কর্মীরা গভীর রাতে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের নন্দনপুর বোয়ালমারি তিস্তা নদী-সংলগ্ন এলাকায় পরিদর্শন করেন। কথা বলে তিস্তা পারের মানুষের সঙ্গে। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা।
এদিকে শুক্রবার সারা রাত বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের একাধিক জায়গায় নতুন করে ধস নামে। কালিম্পংয়ের মেল্লিতে ধস নেমে রাস্তা অবরুদ্ধ। অন্যদিকে দার্জিলিং জেলার চিত্রেতে নতুন করে ধস নেমেছে। কালিম্পং জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, আপাতত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পূর্ত দপ্তর। তাদের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত জাতীয় সড়ক ১০ বন্ধ থাকছে।
অন্য দিকে, গরুবাথান থেকে লাভা হয়ে যে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের যোগ্য ছিল, সেটিও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। খুব প্রয়োজন না থাকলে সেই রাস্তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালাসুভ্রমণিয়ম টি বলেন, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় ধসের কারণে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে লাভা, গরুবাথান রাস্তাটি খোলা রয়েছে। এদিকে তিস্তার জলস্ফীতি হয়েছে। দুপারের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।