রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত ৯ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের সাব্বিরুল হক কণিক এর আছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক চৌধুরী। বুধবার সকালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে ছেলের নিহতের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ‘নিশ্চিত’ হলেও পরে তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারার বরুলছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তবে আজিজুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছবিটি যদি সাব্বিরুলের হয়, তবে তার লাশ দেখবো না লাশ আনতে যাব না”। এবং “গণমাধ্যম ডেকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব” বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আজিজুল হক।
চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, রাজধানীর কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে চট্টগ্রামের সাব্বিরুল হক কনিক আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় তার বাবা আজিজুল হক। তিনি বলেন, সকালে গণমাধ্যমের প্রকাশিত ছবি দেখে তিনি ছেলের পরিচয় নিশ্চিত করলেও পরে পুলিশ কার্যালয়ে এসে বড় ছবি দেখে তার মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। সাব্বিরুলের সঙ্গে ছবির ওই যুবকের মুখ ও চুলে অমিল খুঁজে পান তিনি।
পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা আরো বলেন, আমরা তাকে (সাব্বিরুলের বাবা) ছবি দেখিয়েছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তার ছেলে নিখোঁজ। ৪ মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে সে বের হয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, আমরা আজিজুল হককে ঢাকায় গিয়ে লাশ দেখার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি লাশ সনাক্ত করতে ঢাকায় যাবেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) একে এম ইমরান ভূঁইয়া জানান, কল্যাণপুরে নিহতদের একজন সাব্বিরুল হক কনিক (২২)। তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসালামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (সীতাকু-ে কুমিরা ক্যাম্পাসের) অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
এর আগে দুপুরে আনোয়ারা থানার ওসি আবদুল লতিফ জানিয়েছিলেন, ঢাকায় নিহত জঙ্গিদর একজন আনোয়ারার বাসিন্দা খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আমরা বরুমচড়ায় আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আত্মীয় স্বজনরা বিভিন্ন অনলাইনে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেকে একজনকে সাব্বিরুল বলে সনাক্ত করলেও তার পরিবারের কোন সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
ওসি আবদুল লতিফ আরো জানান, অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক জঙ্গি হাসান নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮জনের নাম জানিয়েছে। তার বর্ণনায় সাব্বিরুল হক কণিকের নাম সাব্বির বলে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিহতদের ছবি প্রকাশ করে তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, আনোয়ারার বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের ছেলে সাব্বিরুল চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সন্তান বিপথগামী হয়েছেন বুঝতে পেরে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব্বিরের পরিবারের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, নিহতদের মাঝে সাব্বিরের ছবি দেখে গতকাল রাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রকাশিত ছবির নিচের সারির মাঝেরজনকে সাব্বির বলে শনাক্ত করেন।
জানাগেছে, সাব্বিরুলের বাবা আজিজুল হক এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি সপরিবারে চট্টগ্রাম শহরে বাস করেন। চাকরি করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। তার বড় ভাই মোজাম্মেল হক চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজিজুল হকের সন্তান এভাবে জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়বে, এলাকার মানুষের কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল।
পারিবারিত সুত্রে জানাগেছে, সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ নামে ফেইসবুকের একটি আইডি থেকে তার কিছু তৎপরতা স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে। ওই আইডি থেকে জানান, তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্ত কোথায় আছেন, কেমন আছেন কিছুই বলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক নিকট আত্মীয় জানান, ২০০৮ সালে নাইনে পড়ার সময় ‘আমগো সাব্বির দা’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি খুলে ব্যবহার করে। গত দুই বছর ধরে সেটি ইনেক্টিভ করে রাখে। দুই বছর আগে ‘আইডি নাম্বার দুই’ থেকে আবার তার তৎপরতা দেখা যায়। এই আইডিটি ছিল কোরআন-হাদিসের আলোকে নানা স্ট্যাটাসে ভরা ছিল।
পুলিশ জানায়, কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের গার্লস হাই স্কুলের পাশে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা ভবন ‘জাহাজ বিল্ডিং’ এর পঞ্চম তলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল। গোপান সংবাদে ওই ভবনে সোমবার মধ্যরাতের পর পুলিশ ও র্যাতবের প্রাথমিক অভিযান শুরু হয়। পরে সোয়াট বাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ নামে মূল অভিযান চলে ভোর ৫টা ৫১ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। অভিযানের পর মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির মধ্যে রাকিবুল হাসান নামে এক জঙ্গি আহত হয়। পরে বিকেলে অভিযানে নিহত ৯ জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের পরিচয় জানতে চায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।