ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

ক্যান্সারকে জয় করলেও অর্থ সংকটে থেমে যাচ্ছে ফারজানার শিক্ষা জীবন

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

অর্থ সংকটে থেমে যাচ্ছে ফারজনার স্বপ্ন।

ক্যান্সার ও পঙ্গুত্বকে জয় করেও যেন অর্থের কারণে থেমে যাচ্ছে ফারজানার শিক্ষা জীবন। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা যেন সামনে এগুতে দিচ্ছেনা তাকে। স্বপ্ন তার শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু কিভাবে সে পথ তো এখনো বহুদুর ? চোখে মুখে তার অনেক স্বপ্ন । পড়ালেখা করে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান মহান শিক্ষকতা পেশায়। কিন্তু কিভাবে কি করবে সে ?

এখনই তো একবেলা খেলে অপর বেলা খাবার জোটেনা। পাঠ্যবই সরকারী ভাবে পেলেও সহায়িকা গুলো কিনতে পারছেনা অর্থের সংকটে। ঠিকমত কিনতে পারেনা খাতা-কলম। সকাল বেলা কোন মতে একটু চা বা পান্থা ভাত খেয়ে মাদ্রাসায় গেলে এভাবেই থাকতে হয় সারাদিন। বিকালে বাড়ী ফিরে ক্ষুধার্থ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি করবেন তার মা পারভীন ? মেয়ের অগোচরে আচলে মুখ লুকিয়ে নিরবে কান্না করা ছাড়া আর কোন উপায় যেন তার নেই। এর পর আরো ছোট দুটি মেয়ে এবং একটি ছোট্ট ছেলে। রাজমিস্ত্রী বাবার যে আয় তাতে এই চার সন্তানের অন্যযোগাতেই সব ফুরিয়ে যায় । এর পর আবার পড়ালেখার চিন্তা কিভাবে করবে ?

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলাম ফটিকছড়ির নাজিরহাট আহমদিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় । অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে চোখে পড়ে মেয়েটিকে স্ক্র্যাচ ভর দিয়ে মঞ্চের দিকে আসছে অতিথির কাছ থেকে পুরস্কার নিতে। মুখটা তার একেবারেই নিস্পাপ। দেখে কেন জানি আমার খুব মায়া হল। তখন এক শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলাম মেয়েটি কোন ক্লাসে পড়ে। তার এ অবস্থা কেন ? তিনি জানালেন মেয়েটি ছাত্রী হিসেবে মেধাবী। ছোটকালে তার ক্যান্সার হওয়ায় একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছিল । এখন এভাবেই মাদ্রাসায় আসে প্রতিদিন। একটু কাছে গিয়ে একটি ছবি নিলাম।

_______ ___-___1
মাদ্রাসার শিক্ষক এবং প্রতিবেদকের মাঝে দাড়িয়ে ফারজানা।

তার পর চলে আসলাম কর্মস্থলে শহরে। কিছুদিন পর মেয়েটির কথা আবার মনে পড়ল। আবার ছুটে গেলাম নাজিরহাট। প্রথমে মেয়েটির বাড়ীতে ,সেখানে না পেয়ে তার মাদ্রাসায় গেলাম। মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ্যের অফিসে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ খবর নিয়ে এক শিক্ষককে দিয়ে তাকে অফিসে আনা হল।

জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছ ? মুখে করুন হাসি দিয়ে বলল ভাল আছি। এর পর কথা হল তার সাথে। নাম শাহিদা সুলাতানা ফারজানা। নাজিরহাট আহমদিয়া আলীয়া মাদাসায় চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে, রোল ৮। জিজ্ঞেস কলাম তোমার পায়ের এ অবস্থা কেন? উত্তরে বলল, ক্লাস ওয়ানে থাকতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তখন বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত স্ক্র্যাচ ভর দিয়ে চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত পথচলা তার।

প্রতিদিন এভাবে মাদ্রাসায় আসে এবং যায়। তার বাড়ী থেকে মাদ্রাসার দুরত্ব অন্তত আধা কিলোমিটার। প্রতিদিন এভাবে আসতে কষ্ট হয়না এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা উত্তর দিলেন না অভ্যাস হয়ে গেছে। আর তাছাড়া আসতে তো হবেই।

________ ___ -__
এভাবে এক পায়ে ভর করে প্রতিদিন বাড়ি থেকে আধা কি. মি. দুরে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করে মেধাবী ছাত্রী ফারজানা।

পড়ালেখার খরচ কিভাবে বহন কর এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা বলল মাদ্রাসার মোস্তাকিম হুজুর নামের এক শিক্ষক মোটামুটি সহায়তা করেন। এ ছাড়া মাদ্রাসা থেকে কিছু সহায়তা করা হয় তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
লেখা পড়া করে কি হবে প্রশ্ন করা হলে ফারজানা জানায় শিক্ষকতা করবে।

ফারজানার মা পারভীন আক্তার জানান, এক ভাই তিন বোনের মধ্যে সে সবার বড়, তার বাবা রাজ মিস্ত্রি আবুল হাসেম চট্টগ্রাম শহরে কাজ করেন ।

তিনি জানান, ২০১২ সালে যখন ফারজানার বয়স ৮ বছর তখন সোফার সাথে হুচট খেয়ে পায়ে আঘাত পায় সে। এর পর সেখানে একটি ফোঁড়ার মত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেটি বড় আকার ধারন করে। স্থানীয়ভাবে অনেক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে এটির পচন ধরে। অবশেষে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পচন ধরে সেখানে ক্যান্সার হয়ে গেছে। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন বাম পা কেটে ফেলতে হবে। অবশেষে ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর ফারজানার বাম পা কেটে ফেলে চিকিৎসকরা।

এর পরও কি শেষ ? পা কেটে ফেলার পর প্রতিনিয়ত ঔষধ সেবন করাতে হয় তাকে। পা কাটার আগে কোমো থেরাপিও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকারও বেশী খরচ হয় এর পেছনে। মেয়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করতে নিজের রক্ত বিক্রি করতেও যেতে হয় পারভীনকে। চিকিৎসা শেষে বাড়ী নিয়ে আসা হয় ফারজানাকে। দিনে দিনে সে বড় হতে থাকে। দেখতে থাকে নানান স্বপ্ন। আবারও শুরু করে শিক্ষা জীবনের যুদ্ধ। সে কিছুতেই হার মানতে রাজি নয়।

কিন্তু তার মা বাবা কিভাবে যোগান দেবে তার পড়ালেখার খরচ। চিকিৎসার সময় অনেকেই সাহায্য করেছেন। এখন আর কেউ খোঁজ খবর নেয় না। কান্না জড়িত কন্ঠে পারভীন বলেন, কি করবো জানিনা। পড়া লেখার খরচ তো দুরের কথা, মেয়েদের ঠিকমত দু মুটো অন্য যোগাতেও পারিনা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।

তিনি জানান, মাদ্রাসা থেকে সরকারী কোন উপবৃত্তি পায় না ফারজানা। এ ছাড়া পঙ্গুভাতা উত্তোলনের জন্য অনেক তদবির করে ৮ মাস আগে বই পেলেও এখনো অনুদান পায়নি।

এর মধ্যে ফারজানার চিকিৎসার সময় স্থানীয় কয়েকটি এনজিও থেকে কিস্তিতে লোন নেন তিনি। সে সব লোন শোধ করতে না পারায় এনজিও কর্মকর্তারা নানা ভাবে হয়রানি করছেন বলেও তিনি জানান। এ ছাড়াও ফারজানা ছোট আরো দু মেয়েকে নুরানী মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন বলে তিনি জানান। চোখে এক অজানা গন্তব্যের হাতছানি তাদের।

নাজিরহাট আলীয়া মাদ্রসার সাবেক অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদেরসহ সভাপতি মাওলানা কামাল উদ্দিন বলেন, ফারজানাকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়। তবুও তার অনেক খরচ। সমাজের বিত্তবানরা যদি তার পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়ান তাহলে ফারজানার স্বপ্ন পূরনের পথ একধাপ এগিয়ে যাবে।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print