নৌযান মালিকদের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোসহ ৪টি মূল দাবির বিষয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এরফলে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পৃতিবার (২৫ আগস্ট) শ্রমিক পরিদফতরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বুধবার (২৪ আগস্ট) শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়েও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি না থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সরকারের প্রতিনিধিরা। তবে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠকটি।
দাবি পূরণে কোনো প্রতিশ্রুতি না আসায় ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম।
তবে সিদ্ধান্ত না হলেও বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে সরকারের প্রতিনিধি দলের একজন জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না হলেও দুটি বৈঠকেই (২৪ ও ২৫ আগস্ট) এ ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে। শ্রম পরিদফতরের পরিচালক এফ এম আশরাফুজ্জামান বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আবারও বৈঠক হবে।
শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট সত্ত্বেও নৌযান চলাচল স্বাভবিক রয়েছে বলে মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে। তাদের দাবি, বুধবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অর্ধশত লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আজও কিছু লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সেগুন বাগিচার স্বাধীনতা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সমস্যা সমাধানে শ্রম মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। গতকাল (বুধবার) একটি বৈঠক ছিল, সেখানে শ্রমিকরা আসলেও মালিকরা আসেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) আবার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক আছে। আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’ মন্ত্রী সমস্যা সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বৈঠক থেকেও কোনো সমাধান আসেনি।
শাজাহান খান সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শ্রমিকরা ধর্মঘট নয়, কর্মবিরতি পালন করছে। ধর্মঘট বা কর্মবিরতি যাই হোক দুর্ভোগ হচ্ছে এটা ঠিক। এজন্য মালিকদের খামখেয়ালিপনা আছে। ব্যবসায় আয় অনেক বেড়েছে। সেই হিসেবে শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। তবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া শ্রমিকদেরও এভাবে আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হয়নি।
উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে নৌ পরিবহনমন্ত্রী বলেন, এর আগে ২৪ এপ্রিল ধর্মঘটের সময় শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণে একটা কমিটি করা হয়েছিল। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এই কমিটির প্রধান। তবে শ্রমিকদের সুবিধাদি বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন না করে এর বিরুদ্ধে দু’জন কার্গো মালিক হাইকোর্টে যান। মূলত এ কারণেই এবার শ্রমিকরা নতুন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর এপ্রিলে নৌযান ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে সরকারের নৌমন্ত্রী শাজাহান খান মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে একটি সমাধানে পৌঁছেছিলেন। সেই বৈঠকে সর্বনিম্ন মজুরি ৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক ধর্মঘট স্থগিত করেছিল শ্রমিকরা। তবে মালিকপক্ষ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট আবেদন করে।
মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, নদীপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, নৌপথের নাব্যতা বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে নতুন করে ধর্মঘটের ডাক দেন নৌযান শ্রমিকরা। ২২ আগস্ট মধ্য রাত থেকে শুরু হয় এ ধর্মঘট।
বৃহস্পতিবার এ ধর্মঘটের তৃতীয় দিন চলছে। ধর্মঘটের কারণে বেশিরভাগ পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীসাধারণ দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।