চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৯ জনের নামে অভিযোগপত্র তৈরি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান আশাসহ ১৪ জন পলাতক রয়েছেন। বাকিরা জামিনে আছেন। অভিযুক্তরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মামলার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ৮ মাসের Qমাথায় চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র তৈরি করল পিবিআই।
ছয় পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রটি সোমবার (২ মে) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দাখিল করার কথা রয়েছে।
পিবিআই সূত্র জানায়, অভিযোগপত্রে ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশাকে মূল খুনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী রুবেল দে, শাহরিদ শুভ, প্রদীপ চক্রবর্তীকে দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় (হত্যাচেষ্টা) অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত অন্য অভিযুক্তদের সাধারণ ধারায় (১৪৩ ও ৩২৩) অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মামলার ২৯ নম্বর আসামি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেনকে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
৩০ জনের জবানবন্দি, ৩২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে অভিযোগপত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ব্যালিস্টিক রিপোর্র্ট ও বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিস এবং সিআইডি’র আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিয়েছে পিবিআই। পাশাপাশি অভিযুক্তদের স্ব স্ব এলাকার থানার মাধ্যমে তাদের অতীত আচার আচরণ চিহ্নিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ময়নাতদন্তে রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা গেছে গুলির আঘাতেই তাপস সরকারের মৃত্যু হয়। ব্যালিস্টিক রিপোর্ট বলছে ৭ দশমিক ৬৮ ক্যালিবার পিস্তলের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়। আর এ পিস্তলটি ব্যবহার করেন আশরাফুজ্জামান আশা। মূলত আশরাফুজ্জামান আশাকেই মূল খুনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অভিযোগপত্রে।
২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে খুন হন সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার। এ ঘটনায় ১৭ এপ্রিল হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা করেন তাপসের সহপাঠী হাফিজুল ইসলাম। এতে ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। যার মামলা নম্বর ১৭ (১২) ১৪। এ মামলায় আশরাফুজ্জামান আশাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমান। পরে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট মামলাটি পিবিআই’তে হস্তান্তর করা হয়।
হত্যা মামলায় ৩০ জন আসামি থাকলেও অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়েছেন এক আসামি। ওই আসামির নাম রুপন বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জবানবন্দি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিভিন্ন রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা অভিযোগপত্র তৈরি করেছি। পিপি মহোদয়ের মতামতের ভিত্তিতে তা সোমবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জমা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, তদন্ত করার পর মামলার আসামি শাহরিদ শুভকে গ্রেফতার করেছিলাম। তিনি এখন জামিনে আছেন। এছাড়া আশাসহ অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
অভিযোগপত্র থেকে রূপন বিশ্বাসের নাম বাদ যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় রূপন বিশ্বাস ভারতে অবস্থান করছিল। বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ পড়েছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘৭ দশমিক ৬৮ ক্যালিবার পিস্তলটি মূলত আশার হাতেই ছিল। তার গুলিতেই তাপস মারা যান। তাই তাকে মূল খুনি হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।’