ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

ফেসবুকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপণ : স্বামীকে বশীকরণ করতে গিয়ে ৭ কোটি টাকা খোয়ালেন নারী

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.
প্রতারক চক্রের দুই হোতা মোঃ তানজিল আহমেদ ও মো. হাসেম।

মো. রেজাউল মাসুদ :

মিসেস আনোয়ারা বেগম একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবার।তার স্বামী একজন নামকরা চিকিৎসক। চাকরি থেকে অবসরের পর মিসেস আনোয়ারা একটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন। স্বামীকে নিয়ে পারিবারিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন।
ফেসবুক স্ক্রল করার সময় হঠাৎ একদিন একটি বিজ্ঞাপন আসে। বিজ্ঞাপনে দেখতে পান একজন সুন্দর সৌম্য চেহারার দরবেশ বেশধারী ব্যক্তি নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে বলছেন, তিনি কোরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর অমিল, বিয়ে না হওয়া, বাচ্চা না হওয়া, লটারি জেতাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। বিজ্ঞাপনে দুজন মেয়ের সাক্ষাৎকারে বলতে শোনা যায়, তারা এই ‘দরবেশ বাবার’ নিকট থেকে তাদের সমস্যার সমাধান পেয়েছেন।
এটা দেখে মিসেস আনোয়ারা তার বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন। কাজের মেয়ে তখন তাকে জানায়, জ্বীন-পরীর মাধ্যমে ‘দরবেশ বাবারা’ এসব সমস্যার সমাধান করে। তার গ্রামের কয়েকজনের এভাবে সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। আনোয়ারা বেগম উৎসাহিত হয়ে বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ‘দরবেশ বাবা’ বেশধারী ব্যক্তি তার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে তার পারিবারিক সমস্যা শুনতে চায়।
দরবেশ বলেন, ‘মা তোমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। বাবার উপর আস্থা রাখো। আমি তোমাকে মা বলে ডাকলাম। আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। তবে কিছু খরচ লাগবে মা। খরচের কথা কাউকে জানানো যাবে না। যদি জানাও তবে তোমার সমস্যার সমাধান হবে না। বিপরীতে তোমার সমস্যা আরো বাড়বে এবং তোমার ছেলেমেয়ের ক্ষতি হবে।
এমন সুন্দর ব্যবহার ও কথা বলে ‘দরবেশ‘ প্রথমে ৯০০০ টাকা বিকাশ করতে বলেন। মিসেস আনোয়ারা তার ভক্ত হয়ে যান। বিভিন্ন অজুহাতে টাকার কথা বলেন, কখনো মসজিদ নির্মান, কখনো দান খয়রাত আবার একহাজার কোরআন শরীফ কিনে খতম করার কথাও বলেন। মাদ্রাসার পাঁচশ ছাত্রকে তিনবেলা খাওয়াতে হবে আজ এক্ষুনি।ভয় আশা আর ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে যেতে থাকেন নিয়মিত। আনোয়ারা বেগম যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, ততক্ষনে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়ে গেছে তার। প্রতিকার পাওয়ার জন্য সিআইডি সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ করেন।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সেরএকটি টিম আনোয়ারা বেগমের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আসামিদের শনাক্ত করে। পরবর্তীতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মোঃ তানজিল আহমেদ কে গ্রেফতার করা হয়।
এই চক্রের মূল হোতা মোঃ হাসেম। হাসেম প্রথমে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ছোট ছোট অ্যামাউন্টের টাকা নিতো। এরপর বড় অ্যামাউন্টের টাকা নেয়ার সময় তানজিদ হাসানকে মিসেস আনোয়ারা বেগমের নিকট পাঠাতো এবং সে একসঙ্গে ৩০-৪০ লাখ টাকা নিয়ে যেত। এভাবে ধাপে ধাপে তারা আনোয়ারা বেগমের নিকট থেকেও প্রায় সাত কোটি টাকা নেয়। অভিযুক্ত তানজিদ হাসানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোলার বোরহানুদ্দিনে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মোঃ হাসেমকে গ্রেফতার করা হয়।

মোঃ হাসেমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সে ২০০৫ সাল থেকে এই কাজ করছে। প্রথম দিকে সে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতো। পরে ২০১৬ সাল থেকে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সে ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে। সে প্রতিমাসে ফেসবুকে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিতো এবং পোস্ট বুস্ট করতো যাতে তার বিজ্ঞাপন সকল মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত স্বল্প শিক্ষিত প্রবাসী বাঙ্গালীদের টার্গেট করে সৌদি আরব, দুবাই, ওমানসহ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে দেশভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। এছাড়াও সে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ও ফ্রান্সে বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। এভাবে অসংখ্য মানুষের সাথে ‘দরবেশ বাবা‘ পরিচয় দিয়ে মোহাবিষ্ঠের মত কথা বলে তাদের নিকট থেকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতো। দরবেশ বাবারূপি প্রতারক মোঃ হাসেম হিন্দি ও আরবি ভাষায় কথা বলাসহ নয় রকম কণ্ঠে কথা বলতে পারে।
এই প্রতারক ফ্রান্স প্রবাসী মোঃ ইমাম হোসেন (৪০) এর নিকট ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয় দিয়ে তাকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চার বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া অন্য আরেকজন ইতালি প্রবাসীর নিকট থেকে একইভাবে লটারি ও জুয়ায় টাকা জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রতারক চক্রের এরকম ২০ থেকে ২৫ জন ক্লায়েন্ট আছে। মালয়েশিয়াতে আছে ১০ থেকে ১২ জন। এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন ফিক্সড ক্লায়েন্ট আছেন যারা গত ৪/৫ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবেশরূপি প্রতারককে টাকা দিয়ে আসছেন।

মো. রেজাউল মাসুদ 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ক্রাইম)

সর্বশেষ

বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত

বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান ফাহিম

২টি নতুন কারখানা ‘লিড’ সনদ পেয়েছে

দেশকে গড়ে তুলতে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হওয়ার বিকল্প নেইঃ ডিএমপি কমিশনার

বিশ ব্যাশে আসছে অদ্ভূত নিয়ম, ৬ বল ডট দিলে আউট, এক বলে নেয়া যাবে ২ উইকেট!

শীতে ঘরের জীর্ণ গাছের যত্ন নিতে করণীয়

‘ফ্রেন্ডস’ তারকা জেনিফারের সঙ্গে ওবামার প্রেমের গুঞ্জন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print