চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্রনাথের ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সচিব প্রভাব খাটিয় তার ছেলে রেজাল্ট পরিবর্তন করেছেন। প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করলেও বোর্ড পরীক্ষায় শুধু বাংলা ছাড়া সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান তার ছেলে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্রনাথের ছেলে নক্ষত্র দেবুনাথ। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা ছাড়া সকল বিষয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫। সব ঠিকঠাক থাকলেও ছেলের বাংলা বিষয়ের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে দেখেন আগেই ৬টি বিষয়ের ১২টি পত্রের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন অন্য কেউ। এ বিষয়ে থানায় জিডি করেন সচিবের স্ত্রী বনশ্রী নাথ।
গুঞ্জন আছে, ফলাফলের চেয়ে কম নম্বর পেয়েছেন সচিবের ছেলে। বিষয়টি জানতেন বোর্ডের কেউ। তাই বেনামে এমন আবেদন করা হয়েছে। তবে রহস্য উন্মোচনে তদন্ত ও প্রভাবমুক্ত পুনঃনিরীক্ষণের দাবি শিক্ষাবিদদের।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ফোন করে করে বিভিন্ন পরীক্ষকের কাছ থেকে খাতাগুলো দেখে আবার ফেরত দিতেন তিনি। এখানে কোনো অফিসিয়াল নির্দেশনা ছিল না। একজন সাবেক কন্ট্রোলার সচিব এ কাজ করেছেন। তিনি এখন বোর্ডকে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিণত করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ভর্তি যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে বিশেষ কোটায় ছেলেকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি করিয়েছেন সচিব। প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করায় বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে কারসাজি জোরালো হয়।
এদিকে, ছেলে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ না করার জন্য সচিব আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্রনাথ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মোস্তাফা কামরুল আক্তার বলেন, এর পেছনে কে আছে এটা যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে, তবে কোনো ক্লু থাকতে পারে। সেই ক্লুর ব্যাপারে আমি অবগত নেই।
এর আগে ২০২১ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালীন এইচএসসির ফলাফলে কারসাজির অভিযোগ উঠে সচিব নারায়ণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে। অসঙ্গতির সত্যতাও পায় মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল আলীম বলেন, যেখানে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটিকে আমলে নিয়ে একজনের শাস্তি আমরা বোর্ড থেকে দিয়েছি। উনি যেহেতু শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা, তাঁর শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু, তিনি প্রধান দায়ী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কোনো শাস্তি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি তা রহস্যজনক।