চট্টগ্রাম–১৫ আসন সাতকানিয়ায় জাতীয় নির্বাচনীকে ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচারণা শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মোতালেবের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে প্রতিদিনই দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি বর্ষণ, ভাঙচুর, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলাল চরতি ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণাকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভীর শ্যালক চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এর আগে বুধবার রাত ১২টার দিকে এমপি নদভীর সমর্থকরা পশ্চিম ঢেমশা ইছামতী আলিনগর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের নির্বাচনী অফিস, গাড়ি ভাঙচুর এবং তার সমর্থকের বাড়িতে গুলি ছোড়ার ছুড়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভীর অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের নির্দেশে সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার পরপর সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী ও শ্যালক চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে চরতির কাটাখালী এলাকায় গণসংযোগসহ প্রচারণা চলছি। এসময় ৪০–৫০ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে এসে নৌকার পক্ষে
প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী (৫০), সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান (৩৫), পৌরসভা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফেরদৌস রুবেল (৫৫), যুবলীগ নেতা কচির আহমদ কায়সার (৪৫), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন (৩৭), মিনহাজ উদ্দীন (৩০), জিহানুর রহমান চৌধুরী (৩০), কায়সার হামিদ অভি (৩৫), রফিজ আহমদ (৫০) ও আরিফুল ইসলাম (২৬)সহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদেরকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা সকাল থেকে চরতির বিভিন্ন এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালিয়েছি। রাত ৮টার দিকে কাঠাখালী ব্রিজ এলাকায় প্রচারণাকালে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪০–৫০ জনের দল আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ১৫–২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, আমি প্রশাসনকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেনি এবং অস্ত্রধারীদেরকে গ্রেপ্তারও করেনি। ফলে তারা এখন নির্বাচনে সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করলে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতো না। প্রশাসনকে বলবো ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করুন। না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। মূলত ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণাকালে স্থানীয় লোকজনকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। বালির মহাল দখলসহ বিভিন্ন কারণে রিজিয়া রেজা ও চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর ওপর স্থানীয় লোকজন অনেক আগে থেকেই ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে প্রচারণা চলাকালে রিজিয়া রেজা চৌধুরীর সাথে থাকা লোকজন চরতি এলাকার দুই ছেলেকে মারধর করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এটা নির্বাচনী বিষয় নয়। আমরা সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরকে যে কোনো ধরনের ঝামেলা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এটাও বলে দিয়েছি যে, কেউ কোনো ঘটনা করলে এটার দায় প্রার্থী নিবেন না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন- বুধবার মধ্যরাতে নদভী’র অনুসারী রিয়াজউদ্দিন রিয়াদসহ ২০-৩০ জনের এক দল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে পোস্টার ও চেয়ার ছুড়ে ফেলে। এ সময় সন্ত্রাসীরা শতাধিক রাউন্ড মতো গুলি ছোড়ে এলাকার লোকজনকে ধাওয়া করে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত ১টি মাইক্রোবাস, ১টি ছোট ট্রাক, ১টি সিএনজি অটোরিকশা কাঁচ ও পুলিশ বহনকারী অপর একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। পরে সন্ত্রাসীরা বর্তমান চেয়ারম্যান মো. রিদুয়ানুল হক সুমনের বাড়িতে হামলা ও এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে।
এসব ঘটনার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।