সরকারি চাকরিজীবী হয়েও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মো. সালাউদ্দিন নামে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
উপজেলার ৫ নম্বর বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী তিনি। মাঠ পর্যায়ে শিশুদের টিকা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন সালাউদ্দিন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন এই সরকারি কর্মচারী। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি।
নির্বাচনী হলফনামায় ১ শতাংশ ভোটারের তালিকা জমায় ত্রুটির কারণে প্রার্থিতা বাতিল হলে পরে উচ্চ আদালতের রায়ে ফিরে পান তিনি।
সোমবার (২৫) থেকে নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে সালাউদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেন নি। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত চিঠি দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে পুলিশ সদস্য ছিলেন মো. সালাউদ্দিন। ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। এরপর ২০১১ সালে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। চাকরি থেকে অব্যাহতি না নিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মনোনয়নপত্রে তিনি নিজেকে ফার্মেসি ব্যবসায়ী উল্লেখ করে কাগজপত্র দাখিল করলেও পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নেওয়া এবং স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকার কথা গোপন করেছেন। তবে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইকালে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংগ্রহে ত্রুটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। সেখানেও প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এরপর উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান সালাউদ্দিন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন তার হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কাউকে না জানিয়ে চট্টগ্রাম–৪ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
বিষয়টি জানার পর চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের পাশাপাশি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম রফিকুল ইসলামকে জানান।
ইতোমধ্যে সালাউদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তার উত্তর না দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। যে কারণে তার বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতিও নেননি। তাছাড়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দায়িত্বেও তার নাম দেওয়া হয়েছে। তাই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। চিঠিতে তিনি সরকারি এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
সরকারি চাকরিতে থাকাবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে।’
এ ছাড়া ১১ নভেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর সালাউদ্দিনকে পরপর দু’টি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। কিন্তু তিনি নোটিশের সুনির্দিষ্ট কোনো জবাবও দেননি।
সর্বশেষ রবিবার তাকে তৃতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরপর ৩ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও জবাব না দেওয়ার পাশাপাশি এখনো কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন সালাউদ্দিন।
সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিধি পরিপন্থীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন), চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সীতাকুণ্ডের ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যে লিখিত অভিযোগ করেছেন সেটির অনুলিপি এখনো তার হাতে পৌঁছায়নি। অভিযোগ হাতে পেলে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে তিনি লিখিতভাবে জানাবেন।
সরকারি চাকরিতে থেকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মো. সালাউদ্দিন বলেন,তিনি উচ্চ আদালতের রায়ে রকেট প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার থেকে জনসংযোগও শুরু করেছেন। তবে সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।