বিদায় ২০২৩। স্বাগতম ২০২৪। নতুন বছর, নতুন পথ চলা, নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন ও নতুন শুরু। ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর কেটে গেছে আমাদের জীবন থেকে। পেছনের বছর আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। ‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’ জীবনের এই কঠিন সত্যটি রবি ঠাকুর বলেছিলেন অনেক আগে। তবুও মায়ার বাঁধন ছিঁড়তে চায় না মানুষ। তেমনি সময়ও চলে যায়।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হয় পহেলা জানুয়ারি। বিশ্বের যেসব দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে। ওই সব দেশ ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার আগে থেকেই নববর্ষের রীতিটি চালু হয়েছে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু এই দুটি দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে পরিচিত হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে!
আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে ‘রিপাবলিক অব ভেনিস’ (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল থেকে দিনটিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ ফ্রান্স; ১৭০০ সাল থেকে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ করে।
এর মধ্যে ব্যতিক্রম ইসরায়েল। দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। তারা এই উৎপন্ন রীতি পালনের বিরোধিতা করে।
এছাড়া কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করেনি। সেসব দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না এসব দেশ।
তবে বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আর তা অফিস-আদালতের কার্যকলাপেই দেখা যায়। আতশবাজি ফোটানোসহ কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে বাংলাদেশের মানুষ, কার্ড ছাপিয়ে এবং ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে বরণ করে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসাব-নিকাশ পেছনে ফেলে নবপ্রজন্ম নতুন বছরকে স্বাগত জানায় নতুন স্বপ্নে সোনালি প্রত্যাশার পাখা মেলে। তাইতো কবি সুফিয়া কামাল লিখেছেন- অনন্ত সূর্যাস্ত-অন্তে আজিকার সূর্যাস্তের কালে/সুন্দর দক্ষিণ হস্তে পশ্চিমের দিকপ্রান্ত-ভালে/দক্ষিণা দানিয়া গেল, বিচিত্র রঙের তুলি তার/বুঝি আজি দিনশেষে নিঃশেষে সে করিয়া উজাড়/দানের আনন্দ গেল শেষ করি মহাসমারোহে।
পুরনো বছরের সফলতা-ব্যর্থতাকে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সামনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বছরে সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে সবার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক, আনুক শান্তি-সমৃদ্ধি-স্বস্তি। দেশের মানুষ সব ক্ষতিকর প্রভাব ও বিশ্বমন্দা থেকে দূরে থাকুক, এই প্রত্যাশা রইলো এই শুভ দিনে; শুভ নববর্ষ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।