সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বাবা-মা ও মেয়েকে গলা কেটে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বিকাশ সরকারের বড় বোনের ছেলে অর্থাৎ আপন ভাগ্নে রাজিব ভৌমিককে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারী) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল। গ্রেফতার রাজীব কুমার ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ কুমার ভৌমিকের ছেলে।
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, নিহত বিকাশ সরকার কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। হত্যাকারী রাজীবের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও রাজীব তার আপন ভাগ্নে। ঘটনার দিন বিকাশ সরকার তার ব্যক্তিগত কাজের তাড়াশ শহরের বাহিরে কাটাগারি বাজারে ছিলেন। বাসায় তার একমাত্র সন্তান তুষি সরকার ও স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ছিলেন।
শনিবার (২৭ জানুয়ারী) থেকে তার স্বজনেরা তাদের মুঠোফোনে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাড়াশ থানায় রিপোর্ট করলে পুলিশ তাদের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় গলাকাটা ৩টি মরদেহ পরে আছে। এ ঘটনায় ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকারের আত্মীয় সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনা তদন্তে একটি টিম গঠন করে জেলা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, হত্যাকারী রাজীবের বাবা মারা যাওয়ার পর ভাগিনা রাজীবের ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার। ব্যবসা চলমান থাকাকালীন হত্যাকারী রাজীব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ ২৬ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছরে এসে হত্যাকারী রাজীবের কাছে তার মামা বিকাশ সরকার অতিরিক্ত ৩৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন।
২২ জানুয়ারি বিকাশ চন্দ্র সরকার দাবিকৃত টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দেবার জন্য রাজীবকে চাপ প্রয়োগ করেন ও রাজীবের মাকেও অনেক কথা শোনান। রাজীব টাকার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২৭ জানুয়ারী) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারকে ফোন করে বাসায় যেতে চায়। বিকাশ বাইরে থাকায় তার তাড়াশের বাসায় গিয়ে মামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থেকে যান। বাসায় রাজীব কফি খাওয়ার কথা বললে তার মামী বাসার নিচে দোকানে কফি আনতে গেলে তার মামাতো বোন তুষির মাথায় লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
ইতোমধ্যে তার মামী কফি নিয়ে বাসায় ফিরলে তাকেও একইভাবে লোহার রড দিয়ে মাথায় কুপিয়ে ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মামী ও মামাতো বোনকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তারা মামাকেও প্রথমে রড ও পরে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ টেনে বেড রুমে রেখে রুমে তালা দিয়ে উল্লাপাড়া ফিরে যায়। যাওয়ার পথে সে লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যায় এবং রক্ত মাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) সামিউল আলম, উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সুত্রধর, তাড়াশ থানার ওসি নজরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জুলহাস উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।