পুলিশের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস ও সন্ধান নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এর মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি হারালেন বাহিনীর একজন সহকারী পুলিশ সুপার।
রোববার (৩০ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের সাবেক এএসপি ইয়াকুব হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সর্বশেষ রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন এএসপি ইয়াকুব। ২০১৩ সালে ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৯ সালে ইয়াকুব হোসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর সার্কেলের এএসপি থাকার সময় থানার একটি দলের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে।
জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সেসময় এএসপি ইয়াকুব একটি দল গঠন করেন। সেই দলে ছিল তার নিয়ন্ত্রণাধীন মিরপুর থানার সাবেক এসআই জীবন বিশ্বাস, কনস্টেবল আল আমিন, আব্দুস সবুর, গাড়ি চালক কনস্টেবল সামিউল ও রানার কনস্টেবল অনিক।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এই দলের সদস্য জীবন বিশ্বাস, আল আমিন ও সবুর ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী মিরপুর পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের লিপি কমিশনারের বাড়িতে আকস্মিকভাবে ঢুকে পড়েন।
সেখানে জনৈক মায়া নামের এক নারীর সঙ্গে আশরাফ হোসেন ও শামীম রেজা নামের দুজন অবস্থান করছিলেন। পুলিশ সদস্যরা ওই দুজনকে ‘অবৈধ কাজ করার অভিযোগে’ হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বেধড়ক মারধর করেন এবং অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাদের ছবি তোলেন। পরে মিরপুর বাজারের ‘বিকাশ ব্যবসায়ী’ সোহেল রানার মাধ্যমে অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন।
তৎকালীন এএসপি ইয়াকুব এই বিষয়টি অবগত থাকার পরেও আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের অপকর্মে সহায়তা করেছেন– বলেও সিদ্ধান্তে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ইয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়। পরে ওই বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ইয়াকুব হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মতামত পাওয়া যায়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতি’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান গুরুদণ্ডের বিষয়ে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি।