ক্রমশই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে। এতে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও। অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছেন ওই এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। চরম এই দুর্ভোগে তারা যে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন তাও তাদের জন্য যথেষ্ট না। এতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ক্রমশই তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
কুড়িগ্রামে পানিবন্দি হয়ে আছেন দেড় লাখ মানুষ। এ ছাড়াও গাইবান্ধায় ৭০ হাজার, রংপুরে ২০ এবং লালমনিরহাটে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছে। আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিশেহারা এসব পরিবার। আছে পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব। সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে মোট জনসংখ্যার ২ ভাগ লোকও ঠিকমতো সহায়তা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বেসরকারিভাবেও নেই কোনো তৎপরতা। এরইমধ্যে শ্রেনিকক্ষে পানি উঠে যাওয়ায় ৩৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্নস্থানে বাধ, সড়কসহ নদীর পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলের সবগুলো নদী দিয়েই বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। সংস্থাটি জানায়, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার, ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার, ব্রক্ষ্মপুত্র কুড়িগ্রামের নুন খাওয়া পয়েন্টে ৫৩, হাতিয়া পয়েন্টে ৫৬, ধরলা পয়েন্টে ৬৭, যমুনা গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৭৬, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৬, সাঘাটা পয়েন্টে ৮২, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫৬, কাজিপুর পয়েন্টে ৫৫, জগন্নাথগঞ্জ পয়েন্টে ১১৮, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৬১, পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৩১ এবং বাঘাবাড়ির আত্রাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি।
এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ঘাঘট নদীর পানি সমতল গাইবান্ধা পয়েন্টে হ্রাস পেতে পারে। ফলে, সিরাজগঞ্জ জেলার আত্রাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
অপরদিকে, গাইবান্ধা জেলার ঘাঘট নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে আগামী ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উজানে আগামী ২৪ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও, রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড়ে ১১০ এবং বদরগঞ্জে ৫৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়ে দেশের উজানে পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৬৭, শিলিগুড়িতে ১০৪ এবং দার্জিলিংয়ে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথাও জানায় আবহাওয়া অফিস। এমন পরিস্থিতিতে অবনতি হয়েছে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, রোববার সন্ধা ৬টায় টায় রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও, লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে এবং ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে তিস্তায় নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবারও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিস্তায় গেলো ২৭ দিনে ৫ দফায় তিস্তায় পানি বাড়লো বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই অববাহিকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে সড়ক যোগাযোগ। নৌকা-কলার ভেলায় কোনমতে যাতায়াত করছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না এবং শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দিরা। তলিয়ে গেছে উঠতি বাদামসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিলেও এসব মানুষের পাশে এখনও দারায়নি কেউই। পানি নামা শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ।
অন্যদিকে, তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে, বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়ার গদাই, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর লালমনিরহাটের হাতিবান্দার সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালিগঞ্জের কাকিনা, আদিতমারির মহিষাখোচ, সদরের খুনিয়াগাছ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, গতিআসাম, বুড়িরহাট, উলিপুরের ঠুটাপাইকর, থেতরাই, বজরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ইউনিয়নের অন্তত ১২৫ পয়েন্টে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
এ বিষয়ে রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা এবং মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের এ পর্যন্ত ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, ২০ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আছে। স্রোত বেশি হওয়ায় মর্নেয়ায় একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। সেখানে যাতায়াতব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেস্টা চলছে। বন্যা মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। এতে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। বন্যার পানি ওঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবেলায় ৩১৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এই সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য বলে জানান বানভাসীরা। তাদের জরুরী ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানান তারা।
অপরদিকে, তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ২নং সলিডারী স্পার বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে তীরবর্তী মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে তা তেমন কাজে আসেনি। স্থানীয়রা বলছেন, যেকোনো মুহূর্তে বাঁধের সামনের অংশের আরসিসি পার্ট ভেসে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। এতে বিস্তৃণ এলাকা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, বাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ায় জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও জিও ব্যাগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহর রক্ষা চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে তারা শুধু পরিদর্শন করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই বাঁধ মেরামত করা না গেলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ উল্টো দিকে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসের পাশে সাধুর বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে হাতীবান্ধা শহর রক্ষার্থে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই বাঁধটি এলাকায় চন্ডিমারী বাঁধ নামে পরিচিত। সেই বাঁধের ৬০-৭০ ফুট অংশ ধসে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে পানিতে ভেসে যাচ্ছে জিও ব্যাগ। পানি কমে যাওয়ার ফলে ভাঙন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, এই বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উল্টো দিকে যাবে। এতে হাতীবান্ধা শহরে তিস্তা নদীর পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা জানান, স্থানীয়রা বলার পরেই ওই স্থানে কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছিল। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আচমকা এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ঘাঘট ও যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে উজানের গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে দেখা দিয়েছে বন্যার। বন্যায় বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বন্যার্ত মানুষেরা। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটসহ সাপ ও বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের ভয় আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে। উপায়ন্তর না পেয়ে বানভাসি মানুষেরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও শেষ সম্বল নিয়ে নিকটবর্তী বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, গাইবান্ধায় সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জে ৯ ইউনিয়নে ৫ হাজার, সাঘাটায় ৮ ইউনিয়নে ১৫ হাজার ১৫০ ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৭ হাজার ৪৯০টিসহ মোট ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছে।
বন্যা কবলিত চার উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে বন্যার পানি উঠায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদরাসাসহ জেলার ৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে, পানিতে নিমজ্জিত ও তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বুলেট জানান, রোববার পর্যন্ত বিভাগের ৩৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এরমধ্যে ৩৭৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫১টি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছেন। ৭টি বিদ্যালয় স্থানান্তর করে পাঠ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৭টি বিদ্যালয়।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সরাসরি ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা উত্তরের ২ কোটি মানুষের জীবন রেখা। প্রতি বছর এখানে ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়। প্রায় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেহেতু পানি চুক্তি হচ্ছে না। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। চীন-ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমেই শুরু করারও দাবি জানান তিনি।