হাজার হাজার থেকে প্রায় শূন্যে নেমেছে কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকদের পদচারণা। এতদিন শত শত বাংলাদেশি ক্রেতায় মুখরিত থাকত মধ্য কলকাতার নিউমার্কেট এলাকা। তবে এখন যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে শুধুই শ্মশানের নিরবতা। বাংলাদেশে স্থিত ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রাখায় একদিকে বেড়েছে ভিসা জটিলতা অন্যদিকে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের তুমুল কড়াকড়ি। দুই এর ফাঁদে পড়ে সীমান্তের এপারে পিষ্ঠ হচ্ছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।
কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার নিউ মার্কেট চত্ত্বর। কেনাকাটা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, সাজসজ্যা সবকিছুই প্রায় এক ছাতার তলায় পাওয়া যায় এই নিউমার্কেট চত্ত্বরে। স্বাভাবিকভাবেই বিদেশিদের কাছে বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা এই নিউমার্কেট। অনেকের কাছেই আবার মিনি বাংলাদেশ বলেও পরিচিত। বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় পা রেখেই এই নিউ মার্কেটের মার্কুইস স্ট্রীট, কিডস স্ট্রীট, সদর স্ট্রীট, টটি লেনসহ বিভিন্ন জায়গায় হোটলেই অবস্থান করেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন এবং তারপরে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জোরদার ধাক্কা লেগেছে কলকাতার পর্যটনে। বাংলাদেশি পর্যটক শূন্যতায় এতে নিউমার্কেট এলাকার হোটেল রেস্তোরাঁ প্রসাধনী থেকে পোশাক ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি ধাক্কা খেয়েছে কলকাতাসহ দক্ষিণ ভারতের বিলিয়ন ডলারের বেসরকারি চিকিৎসা খাতও। মুদ্রার অমূল্যায়ন অন্যদিকে ক্রেতার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নিউমার্কেটের একাধিক মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার।
আগস্টের মাঝামাঝি কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন চরমে উঠলে নিরাপত্তার আশঙ্কায় বন্ধ করে দেয়া হয় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ। সেই থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে মৈত্রী মিতালী এবং বন্ধন ট্রেনের যাত্রা। তবে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে সড়ক যোগাযোগ। কিন্তু পর্যটক শূন্যতায় এখনো সড়কপথে ফেরেনি আগের মত ব্যস্ততা।
পেট্রাপোল সীমান্তের মতো ব্যস্ততম সীমান্তও নেই পর্যটকের ঢল। আকাশ পথে যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও সেখানেও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। কলকাতার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সমস্যা সৃষ্টির পর থেকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশের কম টুরিস্ট এই মুহূর্তে কলকাতায় আসছেন।
কলকাতার কটন গ্যালারির কর্ণধার রাশেদ মুদিয়ালি বলেন, আগে ১০ জন ক্রেতা থাকলে এখন ক্রেতার সংখ্যা নেমেছে তিনজনে। একমাত্র যাদের মেডিকেল ভিসা আছে তারাই অনেকটা বাধ্য হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতায় আসছেন। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমাদের কাছে যেসব ক্রেতারা এখনো আসছেন আমরা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করি আপনাদের দেশের পরিস্থিতি কত দিনে স্বাভাবিক হতে পারে। তারা বলেন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। আমাদেরও ধারণা ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কলকাতার নামী রেস্তোরাঁ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং রেস্টুরেন্ট কিংবা কস্তুররীতেও ছবিটা প্রায় এক। বড় রেস্তোরাগুলো কোনোভাবে টিকে থাকলেও বন্ধ হয়ে গেছে মাঝারি ও ছোট মানের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ।
চিটাগাং রেস্টুরেন্টের শ্রমিকরা জানান, আগে এই রেস্তোরাঁয় ১৪/১৫ কর্মসংস্থান হলেও বর্তমানে রেস্তোরাঁটি বন্ধ। রাঁধুনি কর্মচারীর মজুরি দিয়ে দৈনিক যে পরিমাণ খরচ তার সিকি ভাগ খরচ ওঠে না এখন। বাধ্য হয়ে কুড়ি পঁচিশ দিনের ওপর রেস্তোরাঁ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আপাতত জমানো টাকা দিয়েই চলছে দিন গুজরান করতে হচ্ছে তাদের। তাদেরও আশা খুব দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কলকাতাজুড়ে আবারো নামবে বাংলাদেশি পর্যটকের ঢল।