চট্টগ্রামে অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি ক্রমেই বাড়ছে। এতে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে এখনো আটকা রয়েছেন বাড়িতে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বন্যাকবলিত করেরহাট ইউনিয়নের হাবিলদারবাসা এলাকার বৃদ্ধ জানে আলম বলেন, আমার বয়স ৭৮ বছর। এর আগেও অনেকবার এমন বৃষ্টি দেখেছি। কিন্তু কোনোবার এমন পানি দেখিনি। কখনো নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়নি। এবার ভারত থেকে অতিরিক্ত পানি আসার কারণে এমন ভয়ানক পরিস্থিতি হয়েছে।
জানা গেছে, টানা ৬দিনের বৃষ্টি, ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের অলীনগর, জয়পুর পূর্বজোয়ার, পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং, বৈরয়া, ছত্তরুয়া, আমলীঘাট, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন, বারইয়ারহাট পৌরসভা, জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন, ধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, ওচমানপুর ইউনিয়ন, ইছাখালী ইউনিয়ন, মিরসরাই পৌরসভা, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে বৃহস্পতিবার পুরোদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ঢাকামুখী লেনে উল্টোপথে কিছু গাড়ি চলাচল করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের সব গ্রামের বাড়িগুলো পানিতে ডুবে রয়েছে। কোথাও এক গলা পানি, কোথাও দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানি।
করেরহাট এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, শুভপুর এলাকায় আমার বোন-ভাগিনারা আটকে রয়েছে। পানির স্রোতের কারণে সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছোট দুটি ভাগিনার দুদিন ধরে গায়ে জ্বর। কীভাবে তাদের নিয়ে আসবো বুঝতেছি না।
মোবাররকঘোনা এলাকার মাইনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের যেভাবে হোক বাঁচান। ফেনী নদীর পানিতে পুরো এলাকার অবস্থা করুণ। রাস্তা-ঘাট কিছু দেখা যাচ্ছে না। বোট ছাড়া এখান থেকে যাওয়া যাবে না।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, আমার উপজেলার সব ইউনিয়ন বন্যার শিকার। তবে চারটি ইউনিয়নের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আমরা বোট পাঠিয়ে বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনছি। এসব পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের দেখভালে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।