Search
Close this search box.

ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়, বন্যা ও ভিসা ইস্যু

কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ?

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

গত সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক বছর না যেতেই শেখ হাসিনা এখন ভারতের ‘মাথাব্যথা’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৫ বছরের ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাসিনা। বোন রেহানাসহ বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব এখন তুঙ্গে। ইতোমধ্যে নয়াদিল্লির কাছে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বড় দুই রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি প্রতিবেশীকে টার্গেট করতে ভিসা দিতে দেরি এবং নাদীর পানি বণ্টনে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ ও বিচার করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেছেন, “ভারতের উচিত বাংলাদেশকে তার (শেখ হাসিনা) কাছ থেকে জবাবদিহিতা নিতে সাহায্য করা, কারণ সে স্পষ্টতই বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি করেছে।”

একই দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। গত ৬ আগস্ট বিলুপ্ত হওয়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন কাদের। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করা উচিত। এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সব কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে।

যদিও শেখ হাসিনা ভারতে কতদিন বৈধভাবে থাকতে পারবেন, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি দেশটি।

এ বিষয়ে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ঘটা গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জবাবদিহি করার জন্য তার (শেখ হাসিনা) প্রত্যর্পণ চাচ্ছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা-গ্রহণের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে “ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করা হয়েছে।”

এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এ সময় বাংলাদেশসহ ভারতের ত্রিপুরা, আসাম এবং মেঘালয় এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে (২৩ আগস্ট পর্যন্ত) বন্যা কবলিত প্রায় দুই লাখ মানুষকে জরুরিভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের ১১টি জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশের বাকি অংশ থেকে দশ লাখের বেশি মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করলে অভিযোগ ওঠে, ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, অত্যধিক বৃষ্টি এবং বাঁধের নিচের দিকে বড় জলাভূমির কারণেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি আন্তঃ-সীমান্ত নদী রয়েছে। ওই বিবৃতিতে ভারত বলেছে, “আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানি সম্পদ এবং নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

এছাড়া বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জানান, পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ থেকে পানি “স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে”। তবে বাংলাদেশে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে বলেছেন, অতীতের মতো ভারত পানি ছাড়ার বিষয়ে, বাংলাদেশকে কোনো সতর্কতা জারি করেনি। কর্মকর্তাদের মতে, বন্যার পূর্ব সতর্কতা মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কামাতে সাহায্য করতে পারে।

এ বিষয়ে আল জাজিরাকে অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, বন্যার কারণ যাই হোক না কেন, অনেক বাংলাদেশি পানি বণ্টনের অতীত অভিজ্ঞতার কারণে ভারতকে দোষারোপ করেছেন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এসব নদীগুলো থেকে আরও বেশি পানি চেয়ে আসছে। এরকম একটি চুক্তির জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পানি বণ্টনে অচলাবস্থায় রয়ে গেছে, যা ঢাকার জন্য বেদনাদায়ক বিষয়। আগে বর্ষাকালে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ পানিতে ডুবে থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পানি চেয়েছে তা পায়নি।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত ভিসা প্রক্রিয়াকরণে দেরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভিসা-প্রার্থীরা। এক পর্যায়ে কয়েকশ মানুষ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসিএস) বিক্ষোভও দেখান। এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাদের পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার দাবি জানান। আর হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যে ঢাকায় থাকা কূটনৈতিকদের অনেককে দেশে ফিরিয়ে নেয় ভারত। যদিও পর্যটন ও চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভারতে যান। ২০২৩ সালেও প্রায় এক দশমিক ছয় মিলিয়ন বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণ করেছেন।

ভারতে শেখ হাসিনার আশ্রয়, বাংলাদেশের সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতি ও ভারতীয় ভিসা পেতে দেরি হওয়া ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। নয়াদিল্লি ও ঢাকার দীর্ঘদিন শক্তিশালী কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সাম্প্রতিক দশকগুলোতেও হাসিনা এবং তার ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ দলকে ভারতের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন দিতে দেখা গেছে।

তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন হাসিনার অনেক সমালোচক। তাদের অভিযোগ, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড, ভিন্নমতকে দমন এবং সমালোচকদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনর কারচুপির প্রমাণ থাকার পরও ভারত হাসিনা সরকারকে সমর্থন দিয়ে গেছে।

অধ্যাপক রিয়াজ অবশ্য মনে করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল “বৈধ ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে জ্বলন্ত অসন্তোষের প্রতিফলন, হাসিনার প্রতি ভারতের অযোগ্য সমর্থন।” তার কথায়, এর অর্থ হলো এটি “তিনটি জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন এবং মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন”-কে সমর্থন করেছিল ভারত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান উপদেষ্টাকে দুইবার ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথমবার ড. ইউনূসকে অভিনন্দন ও দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন মোদি। আর শুক্রবার (৩০ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে এটা স্বীকার করে নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনে সম্পর্ক বিঘ্নিত হতে পারে। কিন্তু সরকারে যে থাকবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক যে আমরা এই সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম চালাব।’

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মেরামত করা “ভারতেরই দায়িত্ব”। কারণ হাসিনার শাসন ভারতের সমর্থনের কারণে টিকে ছিল। হাসিনার দীর্ঘ শাসনের অবসানের কথা উল্লেখ করে রিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। ভারতীয়দের উচিত তাদের ইস্যুতে কান্নাকাটি করার পরিবর্তে, নীতি পুনর্নির্মাণ করা।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়েছে তা স্বীকার করুন এবং এগিয়ে চলুন।”

সর্বশেষ

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের এমডির নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামের ছাত্র জনতার সমাবেশে একে-৪৭ এর গুলি চালানো সন্ত্রাসী বাদশা আটক

চট্টগ্রামে বিএনপির নেতার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ঢাবির হলে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় ৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

সালমান শাহ এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নামঃ শাবনূর

সব স্থানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া সঠিক নয়ঃ মির্জা ফখরুল

সাড়ে ২০ লাখ টাকা খরচেই চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print