প্রচলিত আছে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। মূলত ভাত ছাড়া কিছুতেই চলে না বাঙালির। দিনে অন্তত একবার এই খাবার না উঠলে যেন শান্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এ জন্য পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকা হোক না কেন, ভাত খেতেই হবে। ভাত অবশ্য স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
এই উপকারী খাবার খাওয়ার পরই অনেকের আবার চোখ জুড়ে ঘুম হাজির হয়। ঘুমের কারণে চোখ মেলে তাকানোই কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দুপুরে ও রাতে খাবার খাওয়ার পর। কারও কারও তো সকাল, দুপুর কিংবা সন্ধ্যায় ভাত খেলেই ঘুম আসে। কিন্তু কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, কেন ভাত খাওয়ার পর ঘুম আসে?
ভাত খাওয়ার পর ঘুম আসা নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার। এ ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, সারাদিন প্রচুর কাজ করা হয়। এ জন্য শরীরের শক্তির প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় ভাত খাওয়া হয়। কার্বের ভাণ্ডার ভাত শক্তি সরবরাহ করে। এতে থিয়ামিন, নিয়াসিন, ফসফরাস ও জিঙ্ক রয়েছে। অল্প পরিমাণে প্রোটিনও রয়েছে।
ভাত খাওয়ার পর ঘুম আসার কারণ: ভাত হচ্ছে হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার। যা শরীরে পৌঁছে অল্প সময়ের মধ্যে গ্লুকোজে পরিণত হয়। তারপর মস্তিস্কে পৌঁছায় গ্লুকোজ। সেখানে ‘স্যাটাইটির’ অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে চোখ অল্পতেই জুড়িয়ে আসে। এ জন্য বিছানায় গা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। আবার ভাত খাওয়ার ফলে মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা শরীরকে শান্ত করে। এ জন্যও ভীষণ ঘুম আসে।
সমস্যা সমাধানে উপায়: অফিসে লাঞ্চ আওয়ারে পেটভর্তি ভাত খাওয়ার পর প্রায় সবারই ঘুম আসে। এ জন্য খাওয়ার সময় ভাতের পরিমাণ কিছুটা কমানো ভালো। আর খাদ্যতালিকায় ভাতের সঙ্গে মাছ-মাংস-ডিম থেকে যেকোনো একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখুন। যারা নিরামিশপ্রেমী, তারা টোফু বা সোয়াবিন রাখতে পারেন। সঙ্গে এক বাটি পরিমাণ সবজি রাখতে হবে। এতেই ঘুম দূর হবে। শরীরেরও শক্তির ঘাটতি মিটবে।
বিকল্প হতে পারে রুটি: অল্প ভাত খাওয়ার পরও যদি ঘুম আসে, তাহলে দুপুরের সময় ভাত না খাওয়াই ভালো। এ সময় আটার রুটি খেতে পারেন। সঙ্গে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং শাক-সবজি রাখুন। আর খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর একটি গোটা ফল খেতে হবে। তাহলেই চোখ থেকে ঘুমভাব দূর হবে। তবে কারও যদি রুটিতে অ্যালার্জি কিংবা কোনো ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে ওটসে ভরসা রাখতে পারেন। তা না হলে শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
সবার জন্য ভাত: অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস থাকলে হয়তো ভাত খাওয়া যাবে না। আবার হার্টের রোগীরাও ভাত এড়িয়ে চলেন। এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী ভাত খেতে পারবেন। এতে বরং আরও উপকার হবে শরীরের জন্য।