ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের এক মাসের মধ্যে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
জানা যায়, সংস্থার কয়েক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকার বাইরে বদলি করা হচ্ছে। তাদের জায়গায় পছন্দের লোককে ঢাকায় এনে দল ভারি করার পাশাপাশি সংস্থায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএতে অনানুষ্ঠানিক জরুরি বৈঠক হয়। এ বৈঠকে সংস্থায় দীর্ঘদিন একই চেয়ারে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির সিদ্ধান্ত হয়। তবে একসঙ্গে বড় ধরনের বদলির আদেশ দেয়া হলে নিয়মিত কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে– এমন আশঙ্কায় ধাপে ধাপে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রথম ধাপে প্রকৌশলীসহ যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে একই স্থানে রয়েছেন তাদের এবং যেসব কর্মকর্তা দৈহিক লাঞ্ছনার আশঙ্কা করছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয় প্রাধান্য দিয়ে সম্ভাব্য নিরাপদ স্থানে বদলি করার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, গণবদলির সিংহভাগ ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেনি। অথচ রাজধানীর মতিঝিলে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক থেকে আড়াই যুগ ধরে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে।
আবার অতীতে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ঢাকার বাইরে বদলি করায় কাউকে কাউকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ ঢাকার কর্মজীবনের তিন বছর হয়নি, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তিমূলক ঢাকার বাইরে বিভিন্ন নদীবন্দরসহ সংস্থার কার্যালয়গুলোতে বদলি করা হয়েছে।
সংস্থার সিদ্ধান্তের আলোকে ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা আলমগীর কবীরকে ৮ আগস্ট বদলি করে মতিঝিলে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়। পরে গত ১১ ও ১২ আগস্ট পৃথক দুই আদেশে বিআইডব্লিউটিএর ২৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়। ৩, ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথক আদেশে প্রকৌশলী, পরিবহন পরিদর্শক, শুল্ক আদায়কারীসহ বিভিন্ন পদে বড় ধরনের রদবদল হয়। এর মধ্যে ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর দুই আদেশে কেবল শুল্ক আদায়কারী পদেই ৫৯ জনকে বদলি করা হয়েছে। পরিদর্শক পদেও বদলি করা হয়েছে অনেককে।
সর্বশেষ গত রোববার আরেক আদেশে ২৩ জন শুল্ক আদায়কারীর বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সংস্থারই একটি অংশ মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনের বদলি ঠেকাতে তৎপর।
তবে টানা ২০-৩০ বছর ধরে একই টেবিলে কর্মরতদের বদলির আওতায় আনা হয়নি। অন্যদিকে যাদের এখনও তিন বছর হয়নি, তাদের কয়েকজনকে বদলি করায় অসন্তোষ বিরাজ করছে।