ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দুই মাস হলো শেখ হাসিনা সরকার পতনের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর থেকে তিনি ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তবে তিনি দিল্লির ঠিক কোথায় আছেন, সেটা স্পষ্ট না। এ নিয়ে মোদি সরকার তেমন রা করছে না। তবে তার অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের কূটনীতিক পাড়ায় চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। এমন পরিস্থিতিতে তার অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সামরিক বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। হাসিনাকে নিয়ে এ পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে মোদি সরকার। তবে এর বেশি কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছে না দিল্লি। কিন্তু হাসিনার অবস্থান নিয়ে জল্পনা থেমে নেই।
বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাতে ভারতীয় এলিট শ্রেণি ব্যক্তিগতভাবে দাবি করছেন, শেখ হাসিনা এখন ভারতীয় সরকারের একটি সেফ হাউসে রয়েছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও তার সঙ্গে আছেন। শুধু তাই নয়, হাসিনাকে সদলবলে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান বিদেশি সমর্থক ছিল মোদি সরকার। তবে এখন তারা হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও এ বিষয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। দিল্লির এমন অবস্থানের পেছনে কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছে ফিনান্সিয়াল টাইমস।
যেমন, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় শত শত মানুষ হত্যায় শেখ হাসিনার নামে অনেক মামলা হয়েছে। আর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালে হাসিনা নিজেই এই চুক্তি করেছিলেন। এখন তাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের আওতায় আনতে এই চুক্তি কাজে লাগতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ভারতের সঙ্গে (স্বাক্ষরিত) প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে ফেরতের দাবি করতে পারি। তবে আপাতত, আমরা আশা করি ভারত তাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেবে না। কারণ তিনি মিথ্যা ও ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন জানান, প্রতিবেশী দেশ থেকে অনেক নেতার ভারতে পালিয়ে আসার নজির রয়েছে। আমরা সবসময় তাদের আশ্রয় দিয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাও আমাদের চাওয়া অনুযায়ী রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে থেকেছেন।