পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, একটা ফ্যাসিস্ট রেজিম একা একা ফ্যাসিস্ট হয় না। সে সঙ্গে বিচার বিভাগ, ব্যুরোক্রেসি, পুলিশ প্রশাসনকে নেয়। এমনকি সে গণমাধ্যমকেও নেয়। বুদ্ধিজীবীদেরও সঙ্গে নেয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই তো একটা ফ্যাসিস্ট রেজিম গড়ে ওঠে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, বাস্তবতার কথা বললে, আমি কেন মনে করব আমার স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্ন থেকে ভিন্ন? আমরা কিছু লোক দায়িত্ব পেয়েছি, কেউ পাইনি, কিন্তু মোটা দাগে স্বপ্ন ভিন্ন হওয়ার কারণ দেখতে পাই না। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেড় মাস সময় লাগবে, নাকি দেড় বছর লাগবে, দেড় যুগ লাগবে সেটা বোঝা যাবে আপনি কতটা সূক্ষ্ম স্বপ্নের দিকে নিয়ে যেতে চান। আমি যেটা বুঝি সমাজের প্রতিটা জায়গায় যেভাবে ফ্যাসিবাদের দোসররা গ্রথিত হয়ে আছে, সেটা ওভার নাইট একটা টান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব না।
রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে এ উপদেষ্টা বলেন, এটা আমার নিজের মতামত সরকারের ভাষ্য হিসেবে নেবেন না। যেমন ধরেন, আপনি পুলিশ প্রশাসন সম্পর্কে একটা বিস্তারিত সংস্কার করলেন। ধরলাম, সংস্কার হলো, প্রস্তাব পাস হলো, আমরা সকলে একমত হলাম। এটা বাস্তবায়ন করবে কারা? যে লোকগুলো বাস্তবায়ন করবে, তারা তো প্রায় সবাই রয়ে যাচ্ছে। এখন ধরেন ওপর থেকে আপনি ডাইরেক্ট দোসর ভেবে সরাতে পারলেন। কিন্তু বাকি যে বাস্তবায়ন করবে, সেই দায়িত্বে থাকবে কারা? পুলিশ থেকে সরে আসি, আমাদের সাধারণ মানুষে আসি, দীর্ঘদিন ফ্যাসিজমের আবহে থেকে থেকে আমরা কি চিন্তা চেতনায় যথেষ্ট মুক্ত ও স্বাধীন? এই জায়গায়ও একটা বড় চিন্তার ব্যাপার আছে। আমরা সংস্কার করে দিয়ে গেলেও মুক্তভাবে, স্বাধীনভাবে অনেকেই ভাবতে পারি? নাকি এভাবেই অ্যাডজাস্ট করে সমাজে চলতে হবে? এটা আমাদের আচরণে চলে এসেছে। ফলে নিয়মে কাগজে সংস্কার করা সম্ভব। এখনো বাংলাদেশে যে আইনকানুন আছে, সেগুলো যদি জনস্বার্থে প্রয়োগ হতো, তাহলে হয়তো এই অসহায়ত্বের মধ্যে আমরা পড়তাম না।
বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র নিয়ে নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, আমার কাছে স্বপ্ন হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ের স্বাধীনতা, পেশাগত পর্যায়ে স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বাধীনতা। আজকে যে কথাগুলো বলতে পারলেন, কত দিন আগে তো বলতে পারেননি। আমার বড় কথা হলো স্বপ্ন যেন ছোট না হয়। অনেক দিন দলীয় অপশাসন ফ্যাসিবাদের মধ্যে থেকে থেকে কতগুলো জিনিস সমাজে নর্মস হিসেবে ধরে নিয়েছি, কিন্তু সেগুলো হতে পারে না।
তিনি বলেন, নিজেদের আমাদের বোঝাতে হবে যে সত্যিকার অর্থে আদর্শ রাষ্ট্রের জন্য যাত্রা শুরু করতে পারি। একটা আদর্শ রাষ্ট্র পাওয়া দেড় বছর, দুই বছর সময়ের ব্যাপার না। যাত্রাটা আমাদের যেন দৃঢ়ভাবে শুরু হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন চাই, চিন্তার স্বাধীনতাও তেমন চাই। সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হচ্ছে আমি আমার বিচার পাব। এমন একটা সমাজ চাই, যেখানে সময়মতো বিচার হবে। অনুরোধ থাকবে, কথা যেহেতু বলতে পারছি, যত সমালোচনা করা যায় করি, কিন্তু ফোকাস যেন নষ্ট না হয়ে যায়।