দখল, হাট-ঘাট নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি-নিয়োগ বাণিজ্য আর ক্ষমতার অপব্যবহারের শেষ নেই ‘চুয়াডাঙ্গা-২’ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা তিন মেয়াদের এমপি তার নির্বাচনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন অনিয়ম আর দুর্নীতির সাম্রাজ্য। দামুড়হুদা-জীবননগর এলাকায় তার কথা ছাড়া নড়তো না গাছের পাতা-ও। স্বজনপ্রীতির আস্তরণে তার কাছে ঠাঁই পেত না দলের নেতাকর্মীর-ও। অভিযোগ রয়েছে, নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
ত্রি-ফসলী কৃষি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে জমি দখল শুরু করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর। সোলার প্ল্যান্টের নামে একদাগে ৬শ’ বিঘা কৃষি জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সাবেক এমপি। জমি দিতে রাজি না হওয়ায় গ্রামবাসীকে সইতে হয়েছে হামলা-মামলা আর নির্যাতন।
একজন প্রবীণ গ্রামবাসী যমুনা টেলিভিশনকে বলেছেন, ১৮শ’ বিঘা জমির মধ্যে ৬শ’ বিঘা জমির তালিকা দেন টগর। ওই পরিমাণ জমি দিতে অস্বীকার করলে, আমাদের অপর নির্যাতন চালান সাবেক এই সংসদ সদস্য।
আরেকজন মধ্যবয়সী গ্রামবাসী বলেন, এমপি সাহেব বলেছেন, গ্রাম আমার দরকার নেই। তবে, জমি আমার চাই-ই-চাই। পাওয়ার প্লান্ট করতেই হবে।
শুধু জমি দখলই নয়, হাট-ঘাট, বিল-বাওড় নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি আর নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে টগরের বিরুদ্ধে। প্রতিটি সরকারি দফতরে অনিয়মকে বানিয়েছেন নিয়ম।
দেশের অন্যতম চিনিকল কেরু এন্ড কোম্পানি-ও চলতো তার ইশারায়। টেন্ডারবাজির পাশাপাশি হাজার-হাজার একর জমি নামমাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে দখলে রাখতো তার অনুসারীরা। এমনকি, সীমান্তে চোরচালান সিন্ডিকেট-ও নিয়ন্ত্রণ করতেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা।
হলফনামায় দেখা যায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আলী আজগার টগরের বাৎসরিক আয় ছিল ৩৮ লাখ টাকা। সবশেষ নির্বাচনে যা দাড়িয়েছে দেড় কোটি টাকায়।
বিগত ১৫ বছরে স্ত্রীর মালিকানায় ১ কোটি টাকার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটিতে। ঢাকায় বহুতল বাড়ি ৫টি, দর্শনায় বাণিজ্যিক ভবন। স্থানীয়দের মতে, এর বাইরে-ও সাবেক এমপি টগর বেনামে দেশ-বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আলী আজগার টগর।