ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর ভারতে পালিয়ে যান তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবীদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। এদিকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি এবং অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা নির্বাচনে লড়বেন কি না, তা স্পষ্ট করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সজীব ওয়াজেদ জয় এ বিষয়ে কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের বিষয়ে জয় বলেন, তার নির্বাচনে লড়াইয়ের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনের প্রসঙ্গে পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, আমরা কোটা মুভমেন্ট দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এমনকি আমি বলেছিলাম, ৩০ শতাংশ কোটা অনেক বেশি। এটি আমাদের কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। তখন কেউ একজন বলেন যে আমরাও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি। তখন আমি মজা করে উত্তর দিয়েছিলাম, সেজন্যই আমি ৫ শতাংশ ছেড়ে দিয়েছি।
জয় আরও বলেন, তার মা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বেশ বিচলিত এবং হতাশ। কেননা গত ১৫ বছরে তার সমস্ত কঠোর পরিশ্রম অনেকটাই ব্যর্থ হতে চলেছে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে।
নির্বাচনে নিজের অংশগ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে জয় বলেন, আমার কখনই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কে জানে? আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
এর আগে, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনপিআরের এক সাক্ষাতকারে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে সেনাবাহিনী বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৮ মাস। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো নভেম্বরে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এমন পরিস্থিতে আপনার জন্য ১৮ মাস সময় পর্যাপ্ত কি না।
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ এই সংখ্যাগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। যত মাস বা বছর প্রয়োজন জনগণ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘ এবং দীর্ঘায়িত করেন তাহলে আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। অবার কেউ কেউ বলছে, আপনাকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সবকিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০ এ যেতে চাই না। তাই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে।
তিনি বলেন, সংস্ককরণ ২ অর্থ এটাই। আমরা পুরোনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার কী অর্থ থাকল। এর কোনো মানে নেই। কারণ আমরা যা করেছি, সবকিছু ধ্বংস করেছি। তাই আমাদের একটি নতুন নির্মাণ শুরু করতে হবে।
এরও আগে জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচকে’ কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, অন্তবর্তী সরকারে মূল লক্ষ্য সংস্কারকাজ ও যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য। তাদের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্য নেই।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘদিন থাকতে আসিনি। আমাদের কাজ যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশ সংস্কার ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করব। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় অভিযোগ করেন, হাসিনার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জয়ের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা জয়ের বিবৃতির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে, নির্বাচনী সংস্কার প্যানেলের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পর্যালোচনা করে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করবে নাকি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করবে, সেটা সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’
গত মাসে, জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন যে হাসিনা নিজের দেশে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়াই করতে চায়। শিক্ষার্থীদের একাংশ যারা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদেরও এমন দাবি।
শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি তার উপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের নিরাপদ রাখতে চাই, তাই আমি ড. ইউনূস সরকারের মাধ্যমে তাদের ওপর চালানো নৃশংসতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই।’