এমন অনেক মানুষই আছেন যারা ঝাল খেতে পছন্দ করেন। ঝালপ্রিয় মানুষের কাছে প্রথম পছন্দ কাঁচা মরিচ। আবার ঝালপ্রিয় মানুষ ছাড়াও অনেকেই গরম ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ রাখেন। মূলত মুখে মুখে কাঁচা মরিচের উপকারিতার কথা প্রচলিত থাকায় সবার পছন্দ এটি। আর অঞ্চলভেদে এই কাঁচা মরিচকে কেউ গ্রিন চিলি, কেউ আবার সবুজ মরিচও বলে থাকেন।
মশলার উপাদান হিসেবেও নানা ধরনের মুখরোচক খাবারে ব্যবহার করা হয় কাঁচা মরিচ। এই উপাদান শুধু যে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে, বিষয়টি এমন নয়। একক খাদ্য হিসেবেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে এটি। কেউ কেউ আবার কাঁচা মরিচের চাটনি বা আঁচারও করেন। কিন্তু এই প্রয়োজনীয় ও পছন্দের উপাদান নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে যে, সত্যিই কি কাঁচা মরিচ উপকারী? এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এলাকার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শিমু আক্তার। এবার তাহলে কাঁচা মরিচের উপকারিতা এবং এটি খাওয়া সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
চোখের সমস্যায় কাঁচা মরিচ: কাঁচা মরিচে ভিটামিন এ বিদ্যমান। যা রাতকানা নিরাময় ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই মশলা চোখের জন্য ভালো।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ: অনাকাঙ্ক্ষিত বেড়ে যাওয়া স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে আনা বা কমিয়ে ফেলতে মরিচ উপকারী। এতে বিদ্যমান ক্যাপাসিয়াসিন উপাদান তাপ উৎপাদন করে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। একইসঙ্গে মুখের স্বাদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমাতে সহায়তা করে।
সর্দি-কাশির সমস্যায় কাঁচা মরিচ: সর্দি-কাশির মতো সমস্যা হলে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ধরনের সমস্যায় কাঁচা মরিচ খাওয়া হলে নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দূর হয়।
হৃৎপিণ্ডের উপকার: রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ভিটামিন কে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কাঁচা মরিচে বিদ্যমান। এ জন্য কাঁচা মরিচ খাওয়া হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়। আবার এতে থাকা ক্যাপাসিয়াসিন ও ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান হৃৎপিণ্ডকে কার্যকর রাখে। একইসঙ্গে রক্তচাপ ও রক্তে চর্বি কমাতেও কার্যকর
ব্যথা নিরাময়ে কাঁচা মরিচ: কাঁচা মরিচে থাকা ক্যাপাসিয়াসিন উপাদান ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলি হাড় ব্যথা, মাথাব্যথা ও বাতের ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ক্যাপাসিয়াসিন শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জন্য যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের ইনসুলিনের পরিমাণ অনেকটা কম লাগে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও খানিকটা হ্রাস পায়।
কাঁচা মরিচ যেসব কারণে স্বাস্থ্যোপকারী: কাঁচা ও লাল মরিচের পুষ্টিগুণ প্রায় কাছাকাছি হলেও এর মধ্যে কাঁচা মরিচের উপকারিতা তুলনামূলক বেশি। কেননা, এতে তারল্যের পরিমাণ বেশি। কোনো ধরনের ক্যালরি নেই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলি বেশি। বিটাক্যারিটন উপাদান অধিক হওয়ায় পরে ভিটামিন এ তৈরি করে থাকে। আফলাটক্সিন নামক ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে না এতে। এছাড়া কাঁচা মরিচে কোনো ধরনের কৃত্রিম রং দেয়ার আশঙ্কাও থাকে না।
কী পরিমাণ খেতে হবে: প্রতিদিন ১২-১৫ গ্রাম পরিমাণ কাঁচা মরিচ খেতে পারেন। পরিমিত পরিমাণে কাঁচা মরিচ খাওয়ার ফলে পেট জ্বালাপোড়ার সমস্যা হওয়ার অনেকটাই কমে যায়।
গ্যাসট্রিক-আলসারের জন্য কি মরিচ দায়ী: মরিচ খাওয়ার ফলে গ্যাসট্রিক-আলসারের মতো সমস্যা হয়ে থাকে বলেই বিশ্বাস অনেকের। বিষয়টি আসলে এমন নয়। মূলত পরিমিত পরিমাণে মরিচ খাওয়া হলে এ ধরনের ঝুঁকি থাকে না।