ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগের প্রশ্ন উঠছে যে কারণে

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি – এমন খবর আসার পর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের উদ্যোগের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি দেয়া এক বক্তৃতায় এ ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ড. খলিলুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আরাকানের পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করা হবে কি না তা নিয়ে ‘সুচিন্তিত’ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজ বলছেন, আরাকানে এখন যে পরিস্থিতি তাতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের স্বার্থে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এর ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেকে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত) বলছেন, সীমান্ত অঞ্চল আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে এটি যেমন সত্যি, তেমনি রাখাইনের রাজধানী এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি নেপিদো সরকারের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। সে কারণে চলমান পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক -উভয় দিক বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশকে এগুতে হবে।

থাইল্যান্ড ভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী শনিবার তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে যে, বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের পুরো সীমান্তই এখন আরাকান আর্মির দখলে। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে খবর সামনে আসে। এই প্রথম মিয়ানমারের পুরো একটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

এই অংশের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরই বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে আরাকান আর্মির সাথে সরকারের যোগাযোগ করার প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে।

মূলত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা: বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক বিবেচনাসমূহ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ড. খলিলুর রহমান। সেখানে তিনি বলেন ‘আরাকান আর্মির চূড়ান্ত অবস্থা কী হয় তা এখনো অস্পষ্ট। তবে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যাতে অন্তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। তবে গভীরভাবে বিবেচনা না করে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হবে না’।

বিষয়টি নিয়ে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরাকানের পরিস্থিতির দিকে তারা গভীরভাবে নজর রেখেছেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই তাদেরকে নিতে হবে। আমাদের জন্য সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনের সাথে আমাদের সীমান্ত আছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক কী অবস্থায় আছে এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কারা সেটি নিশ্চিত হয়েই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন ইস্যু হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”সে প্রশ্ন এখনো আসছে না, কারণ বাংলাদেশ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে মাত্র”। ইতোমধ্যেই আরাকান আর্মির সাথে কোন যোগাযোগ সরকারের হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বাইরে থেকে শুনতে পাচ্ছি তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা আরও দেখবো। সীমান্ত কারা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটি স্পষ্ট হতে হবে আগে”। তবে রাখাইন ও মিয়ানমার ইস্যুর দিকে নজর রাখেন সরকারের এমন কিছু সূত্র বলছে, কোন চ্যানেলে কীভাবে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ হতে পারে তা নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চলছে।

মিয়ানমার বিষয়ের লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ কয়েক বছর আগে আরাকান আর্মির জেনারেল নায়েং এর সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তার মতে নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা বাণিজ্য—এ তিনটি কারণে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা বাংলাদেশের জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এখনকার বাস্তবতা হলো আরাকান আর্মিই সেখানকার প্রধান শক্তি। বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রধান উত্তর আরাকানের বিপুল এলাকা তাদের দখলে চলে গেছে। সে কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলেও তাদের সম্মতির দরকার হবে। এটা সম্পূর্ণ নতুন এক বাস্তবতা। এখন এর নেপিদোর সরকার (জান্তা সরকার) চাইলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না।”

তার মতে বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে কি না বা কীভাবে গড়ে তুলবে কিংবা সেই যোগাযোগে রোহিঙ্গাদের কীভাবে যুক্ত করবে- এসব বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে এগুতে হবে। তার কথায়, “মনে রাখতে হবে রোহিঙ্গাদের আরও সংগঠন আছে। তেমন কোন কোন সংগঠন আবার আরাকান আর্মির বিরুদ্ধেও আছে”।

অন্যদিকে একসময় সিটওয়েতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলছেন রাখাইন রাজ্য পুরোটা আরাকান আর্মি দখল হয়েছে এটা এখনি বলা যাবে না। তবে সীমান্ত জুড়ে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “রাখাইনের রাজধানী, পার্লামেন্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকারি বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীও এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নেপিদোতেও মিয়ানমার সরকার আছে, যার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে বাংলাদেশের। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশকে এগুতে হবে।”

যদিও কেউ কেউ মনে করেন সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে আরাকান আর্মির সাথে দ্রুত ‘অনানুষ্ঠানিক’ যোগাযোগ করা উচিত বাংলাদেশের। এর প্রথম কারণ হলো সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, যাতে করে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আর না ঘটতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের লড়াইয়ে হেরে সরকারি বাহিনী বিপুল অস্ত্র ফেলে গেছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর চোরাচালানের আশংকা আছে বাংলাদেশের দিক থেকে এবং এই নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেও অনেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের তাগিদ দিচ্ছেন।

সর্বশেষ

ঢাকা-৭ আসনের সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের

জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসারস্থল জিয়া পরিবার: ব্যারিস্টার মীর হেলাল

সোমবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বছরের মাঝপথে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে জনগণের নাভিশ্বাস উঠবে

নোয়াখালীতে হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেফতার

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print