চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানার শহীদ নগর এলাকায় বুধবার রাতে খুন হওয়া যুবক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের (চবি) বাংলা বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চৌধুরী আলাউল বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকালে লাশ দেখে তার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম ও ছোট ভাই সালাউদ্দিন পরিচয় নিশ্চিত করেছে বলে জানায় থানা পুলিশ।
তবে চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডে কারণ উদঘাটন কিংবা খুনিদেন আটক করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আলাউলের চবি’র বন্ধুদের ধারণা প্রেমঘটিত ঘটনায় আলাউল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
প্রেমের এ সুত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বায়েজিদ থানা পুলিশ।
এদিকে আলাউলের এলাকার বন্ধু মোহাম্মদ জাফর পাঠক ডট নিউজকে জানায়, বুধবার বিকেলের দিকে আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আলাউলের সাথে আমার দেখা হলে সে আমাকে কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করে। তখন আমি বড়দিঘীর পাড় যাবো জানালে সে বলে “আমি অক্সিজেন যাবো আমার সাথে চল”। এ বলে আমরা মদনহাট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩নং বাস তরীতে করে রওনা দিই। যাওয়ার পথে সে আমাকে একটি মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলে তার (মেয়েটির) সাথে দেখা করতে যাবে। এরপর গাড়ি বড়দিঘীর পাড়ে এলে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার (আলাউল) আর এক বন্ধু জানায়, গৃহ শিক্ষক হিসেবে থাকাকালীন প্রতিবেশী ইয়াছমিন আকতার রুম্পা নামে এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াই আলাউল। দীর্ঘ ৫ বছর সম্পর্ক থাকাকালে কয়েক বছর পূর্বে হাটহাজারীর বড়দিঘীর পাড় এলাকার এক ছেলের সাথে রুম্পার হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও তাদের সম্পর্ক ছিল এবং রুম্পা বাপের বাড়িতে আসলে আলাউলের সাথে দেখা করতো।
আর এ দেখা দেখি এবং পরকিয়ার ব্যাপারটি এক পর্যায়ে রুম্পার স্বামী জেনে গেলে তাদের পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এবং তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায় বলে আলাউলের এ বন্ধু জানায়।
এ ঘটনার আরো বেশ কিছুদিন পর রাউজানের এক ছেলে সাথে রুম্পার পূনরায় বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে রুম্পা এবং তার স্বামী বায়েজিদ থানার অক্সিজেন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো।
বিগত ৫/৬ মাস আগে একদিন হঠাৎ আলাউলকে মোবাইলে ঝগড়া করতে দেখলে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে রুম্পার দ্বিতীয় স্বামী তাকে নাকি হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এরপর বিষয়টা মিটমাট করে দিলে সে আর রুম্পার সাথে যোগাযোগ রাখবে না বলে জানায়।
তাই বন্ধুমহলে ধারণা এ পরকিয়া প্রেমের বিরোধের কারণেই আলাউল খুন হতে পারে। তাদের ধারণা ঘটনার দিন হয়তো রুম্পা ও তার দ্বিতীয় স্বামী কৌসলে নতুন বাসা দেখার কথা বলে আলাউলকে ঢেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তাই রুম্পা ও তার দ্বিতীয় স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যার রহস্য উদঘাটন হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত দুইটার দিকে বায়েজিদ থানার পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় একটি চারতলা ভাড়া বাসার টয়লেট থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে বায়েজিদ থানার পুলিশ। প্রাথমিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায়।
বুধবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে বায়োজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছিলেন, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, বন্ধুর সাথে দেখা করবে বলে বুধবার বাসা থেকে বের হয় আলাউল। রাতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৩মার্চ) বিকেল চারটার দিকে নিহত আলাওলের বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম ও ছোট একমাত্র ছোট ভাই সালাউদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আলাউলের মরদেহ শনাক্ত করে। রাতেই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে লাশ নিয়ে যায়।
আলাউল হাটহাজারীর মদনহাট বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হেলাল চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ শাহআলমের বড় সন্তান। রাত সাড়ে ১০টায় তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে রাতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বায়োজিদ থানার এসআই জাকির হোসেনের বক্তব্য জানতে তার মুটোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
তবে ওসি মো. মহসীন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, প্রেম ঘটিত বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত এগুচ্ছে। এখনো মামলা হয় নি। দাফন সম্পন্ন করে অভিভাবকরা থানায় এলে মামলা হবে।