রমজানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইফতারের আসর বসে মসজিদে নববীতে। প্রতিদিন সেখানে বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ রোজাদার ইফতার করে থাকেন। কারো কারো মতে এ সংখ্যা প্রায় প্রায় আড়াই লাখ। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ইফতারের আয়োজন করেন মদিনার বিত্তবানরা। প্রতিদিন আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতার পরিবেশনের প্রস্তুতি। মসজিদে নববীর ইফতার নিয়েই বাংলামেইলের এই আয়োজন।
পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় মসজিদ ই নববী বা মদিনা মসজিদে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পবিত্র মসজিদে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষ সেখানে একসঙ্গে ইফতার করেন। অথচ কোনোরকম বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ে না।
সৌদি আরবের ‘আল মদিনা’ দৈনিকের প্রতিবেদক এ সম্পর্কে বলেছেন,‘আমি সেখানে বিভিন্ন জাতি, বর্ণ আর সংস্কৃতির লোকজনকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোজা খুলতে দেখেছি। কী অপূর্ব সৌহাদ্য।’ তিনি আরো জানান, রোজায় মসজিদে নববীতে প্রচুর ইফতার আসে। ফলে সেখানে জমায়েত হাজার হাজার রোজাদারদের খাদ্য ও পানীয়ের কোনো কমতি হয় না। এখানে ইফতারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রোজাদারদের প্রত্যেকেই তার পাশের জন ঠিকমত খাবার ও পানি পেয়েছেন কিনা সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
মদীনা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা আদনান দাবুর। তিনি জানান, আগে আসর নামাজের আগেই শহরের বেশিরভাগ লোক নবীর মসজিদে চলে যেতেন। তারা মসজিদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত রওজা শরিফের পাশে বসার চেষ্টা করতেন। তখন অবশ্য এত ভিড় হত না। এই রওজা শরিফেই রয়েছে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) কবর।
আদনান দাবুর বলেন,‘গত ৫০ বছর ধরে আমরা এই রীতি মেনে চলছি। আমরা মসজিদে নববীতে ইফতার করতে পছন্দ করি। আগে অবশ্য মসজিদে অত বিদেশি রোজাদার দেখা যেত না। আমরা পানি, বিভিন্ন প্রকার খেজুর, রুটি আর মদিনার বিশেষ খাবার নিয়ে নবীর মসজিদে জড়ো হতাম ‘
তিনি আরো বলেন,‘এখনো আমরা ওই ঐতিহ্য মেনে চলি। আমরা নবীর মসজিদে সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করি। ইফতারের পর সেখানে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম ভাইদের সঙ্গে মিলে মাগরেব, এশা ও তারাবিহ পড়ি। কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে ইফতার করছে। এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা।’
মসজিদ ই নববীতে গত ২০ বছর ধরেই কিছু পুরনো বন্ধুর সঙ্গে মিলে ইফতার করে আসছেন ফয়েজ আল আহমাদি। তিনি বলেন,‘গোটা রমজান জুড়ে আমি এই মসজিদে ইফতার করি। আমি কোনো কারণে এই সুযোগ মিস করতে রাজি নই। এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে ইফতার করতে আসতাম। এখন বড় হওয়ার পরও এখানে ইফতার করে একই রকম আনন্দ পাই।’
মসজিদে নববীতে ইফতারের আয়োজনে কোনো রকম কমতি থাকে না। মদীনার বাসিন্দারাই এই বিপুল ইফতারের মূল জোগানদাতা। মসজিদের কোনায় কোনায় থরে থরে সাজানো থাকে খেজুর, রুটি, দই, পানিসহ নানা খাদ্যদ্রব্য। কোনো কিছুরই অভাব নেই। যার যত ইচ্ছা খাও।
এই মসজিদে শৈশব থেকে ইফতার করছেন আবদুল ওয়াহাব আল বালুচি। ছোটবেলায় তিনি আসতেন বাবা ও পরিবারের অন্যান্য মুরব্বিদের সঙ্গে। এখন নিজের ছেলেদের নিয়ে আসেন। তিনি বলেন,‘আমরা মসজিদে নববীতে ইফতার করতে পছন্দ করি। আমরা ইফতার করি দই, খেজুর, বিভিন্ন প্রকারের রুটি, চা আর আরবীয় কফি দিয়ে। এখানেই আমরা আসর, মাগরেব, এশা ও তারবির নামাজ আদায় করি।’
সূত্র: সৌদি গেজেট