আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের টিআই বজলু ও দেলোয়ার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটক পরবর্তী বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। গাড়ীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরেও অহেতুক আটক করে জোর পূর্বক টাকা আদায়ের অহরহ ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
চাহিদা মতো টাঁদা না দিলে চালক ও মালিকদের নাজেহাল করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ট্রাফিক পুলিশের ঈদ বাণিজ্য বন্ধ করা, ন্যায় বিচার ও হয়রানীর থেকে বাচার জন্য চালক ও মালিকরা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন কর্মসুচি ঘোষণা করেছে তারা।
অভিযোগে জানাগেছে, কক্সবাজার শহর যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখা ট্রাফিক বিভাগে বর্তমানে ২ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) , ২ জন সার্জেন্ট সহ ১০ জন কনষ্টেবল রয়েছে। তারা বিভিন্ন যানবাহন থেকে টোকেন ভিত্তিক অন্তত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে। প্রতিদিন অবৈধ হিসেবে মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস, ট্রাক,কার, ম্যাজিক , চাদের গাড়ি, মাহিন্দ্র, দুরপাল্লার চেয়ারকোচসহ যানবাহন আটক করেন। কিন্তু বৈধ কাগজ থাকলে যতসব ঝামেলা। কাগজপত্র না থাকলেই সব ঝামেলা শেষ। শুধু দিতে হয় টাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই শহরের ট্রাফিক অফিসে গাড়ির কাগজপত্র বেচা কেনার হাট বসে প্রকাশ্যে।
এমনও অভিযোগ রয়েছে, যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলার নকল রশিদ (কেইচ স্লিপ) ধরিয়ে দেয়া হয়। জরিমানা আদায়ের নামে পুরো টাকাই টিআইদের পকেটস্থ করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে।
রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি ইউনিয়নের আসকর খিল এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক মনজুর জানান, তার একটি সিএনজি রয়েছে। সেটি চালিয়ে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
তিনি জানান, ২৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন মুমূর্ষ রোগী নিয়ে রামু থেকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আসার পথে রাত ১১টার দিকে শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোলপাম্প এলাকা থেকে ট্রাফিস সার্জেন্ট মুহিবুল্লাহ গাড়ীর কাজপত্র তল্লাশী করেন সিএনজি গাড়ীটি আটক করে পুরাতন পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে। ২৭ জুন সন্ধ্যার পর গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে দেখা করতে বলেন।
সিএনজি মালিক মনজুর আরো বলেন, ২৭ জুন সন্ধ্যার পর গাড়ীর মুল কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে টিআই বজলু ও টিআই দেলোয়ারের কাছে গেলেই জরিমানা বাবদ ৮হাজার ৭’শ টাকা দাবী করা হয়। তিনি দাবী করেন, তার গাড়ীর কাগজপত্রে কোন ধরনের ত্রুটি না থাকার পরেও অহেতুক জরিমানা করার কারণ জানতে চাইলে দু’টিআই উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ করেন।
পরে তাদের দাবীর মধ্যে ২৯০০টাকা দিতে তিন হাজার টাকার একটাকাও কম হবে না বলে সাশিয়ে দেয় এবং অশালিন ভাষায় গালমন্দ করে অফিস থেকে বের করে দেন।
একই ঘটনা জানালেন ঘোনারপাড়া এলাকার আরেক সিএনজি চালক নুরুল আমিন। গত ২১ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৪টায় তার সিএনজিটি আটক করে। গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করার পরেও গত ৬দিন পর্যন্ত কাল ক্ষেপন করে জরিমানা হিসেবে ৮হাজার ৭’শ টাকা দাবী করে। তবে বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও জরিমানার নামে অবৈধ টাকা আদায়ের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ফোন করে অন্যায় ভাবে টাকা আদায় করার কারণে জানতে চাইলেই বেকায়দায় পড়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার সোমবার সন্ধ্যায় বিনা টাকায় সিএনজিটি ছেড়ে দেন। একই ঘটনার শিকার হয়েছেন, পিএমখালীর চালক আবদুল্লাহ, চালক মানিকসহ অর্ধশত লাইসেন্সধারী চালকরা। এধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটাচ্ছে। অতচ বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও আটক বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
ট্রাফিক পুলিশের অহেতুক হয়রানী ও চাঁদাবাণিজ্য বন্ধের দাবী নিয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে হয়রানীর শিকার বেশ কিছু চালক জেলা প্রলিশ সুপার কার্যালয়ে যান। সেখানে সিএনজি চালক নুরুল আমিন, নুরুল আলম , মনজুর আলম , নুরুল হক, নেজাম এব্যাপারে লিখিত ও মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন সহকারী পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরার কাছে। মঙ্গলবার সকালে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার কথাও জানান হয়রানীর শিকার চালকদের।
সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা জানান, ট্রাফিক পুলিশ মাসিক চাঁদাও আদায় করেন। আবার আটক করে জরিমানার নামে অবৈধ ভাবে টাকা আদায় এবং হয়রানী ও নাজেহাল করে আসছে।
তারা জানান, ট্রাফিক পুলিশের এধরনের অনৈতিক কাজ বন্ধে দাবীতে আজ মঙ্গলবার চালকরা আন্দোলন কর্মসুচির ঘোষণা দিয়েছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বজলু ও দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকারী দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কে কি বলছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।