আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর ব্যাপক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কামরুল সিকদার প্রকাশ আবু মুছার নাম। এই মুছার নির্দেশেই মিতুকে খুন করা হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এই মুছা গত এক সপ্তাহ যাবৎ পুলিশের হাতে আটক থাকার কথা শোনা গেলেও পুলিশ তা স্বীকার করছে না।
পুলিশের দাবি তারা মুছাকে গ্রেফতার করতে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মুছাসহ মিতু হত্যার অন্য আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে দেশের সকল বিমানবন্দর এবং স্থল সীমান্ত এলাকাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
মিতু হত্যায় পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো পলাতক আসামিরা হলো ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ আবু মুছা, হত্যার সহযোগী মোহাম্মদ রাশেদ, কালু শাহজাহান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাশ ভট্টাচার্য্য বুধবার (২৯ জুন) বিকেলে পাঠকডটনিউজকে জানান, মিতু হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে যেসব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হত্যার নির্দেশদাতাসহ অন্য সহযোগীদের নাম জানিয়েছে। এদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠাণ্ডাছড়ি গ্রামের জনৈক কামরুল সিকদার ওরফে আবু মুছা মিতুকে হত্যার করার জন্য ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে।
হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করতে পুলিশ জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। খুনের নির্দেশদাতা মুছাসহ অন্যান্য পলাতক আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আসামিদের ছবিসহ দেশের সকল বিমানবন্দর, স্থল বন্দর ও নৌ-বন্দরসমূহে সতর্কবার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন কামরুল সিকদার ওরফে আবু মুছা। এ ছাড়া মুছা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশও নিয়েছিলেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাণ্ডাছড়ি গ্রামে মুছার স্থায়ী নিবাস। তবে সে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দার হাট এলাকায় বসবাস করে আসছিল। মিতু হত্যার পর থেকেই মুছার চট্টগ্রাম শহরের বাসাটি তালাবদ্ধ রয়েছে। গ্রামের বাড়িতেও তার কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। ঠাণ্ডাছড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুছা এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং একাধিক খুন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মামলার আসামি।
চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে মুছা বাবুল আক্তারের একজন বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবেও কাজ করছিল বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে মুছা ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ও মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, মিতু হত্যার নির্দেশদাতা মুছাকে গ্রেফতার করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মুছাসহ অন্য পলাতক আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মুছাসহ অন্য আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান জানান।
উল্লেখ্য, মিতু হত্যায় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে দুই খুনি ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।