
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সন্ত্রাস ও জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক শনিবার অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আওয়ামীলীগের চার নেতার মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডা হয়েছে। পুলিশের তৈরী করা জঙ্গির তালিকায় এক ছাত্রলীগ নেতা ও তাঁর হাসপাতালের নাম অর্ন্তভূক্তি নিয়ে সৃষ্টি হয় এই বিতন্ডা।
এনিয়ে আ’লীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, পৌর মেয়র ইসমাঈল হোসেন, আ’লী নেতা এইচএম আবু তৈয়ব ও নাজিমুদ্দিন মুহুরী একে অপরকে আক্রমন করে বক্তব্য প্রদান করেন।
উক্ত সভায় দর্শক সারিতে এক সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে মর্মে অভিযোগ তোলেন ফটিকছড়ি পৌর মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন। মেয়র বলেন এক সময় হেফাজতের ক্যাডার হয়ে উপজেলার ভূজপুর এবং লেলাং এলাকায় তান্ডবের নেতৃত্ব দানকারী সন্ত্রাসী সিরাজ এখন ছাত্রলীগ নেতা হয়ে গেছে।
বর্তমানে উত্তর জেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য এইচএম আবু তৈয়বের অনুসারী হিসেবে জমি দখল, চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্মে অংশ নিচ্ছে। হেফাজতের চিহ্নিত একজন ক্যাডার কিভাবে রাতারাতি ছাত্রলীগ হয়ে গেল প্রশ্ন করেন মেয়র।
এ ছাড়া গত কয়েকদিন আগে পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে দু পক্ষের জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় উক্ত হেফাজত ক্যাডার প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলিতে অংশ নেয়।
মেয়র ইসমাইল বলেন,উপজেলা পৌর সদরের একটি ডায়গোনস্টিক সেন্টারের তিন ডাক্তারের নাম জঙ্গি তালিকায় কিভাবে গেল ? কারা দিল এসব নাম। তাদের মধ্যে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ডাক্তার ও রয়েছেন।

এসময় আরেক আ’লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন মুহুরী মেয়ররের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে বলেন, তারা তৈয়বের নাম বিক্রি কওে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি জমি দখল করছে।
এর আগে পৌর আ’লীগের সভাপতি এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র ইসমাইলকে আক্রমন করে বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ফটিকছড়ি পৌরসভা এলাকায় বহিরাগত লোকজন ভোটার হয়ে বসবাস করছে । তারা এ খানে নানা ধরনের অপরাধে সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে । উত্তরবঙ্গের এসব লোকজন মেয়রের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত করেন।
এছাড়া পৌর সদরের হামজার টিলা এলাকায় নানান পেশার অপরাধীরা অবস্থান নিয়ে নানা অপকর্ম করে পালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এসব নিয়ে কোন তদারকি করেনা। পৌর আ’লীগের এ নেতা বলেন, পৌর সদরের এক ছাত্রলীগ নেতার প্রাইভেট হাসপাতালকে জঙ্গি আস্তানার তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। এসব কিভাবে হল তিনি জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি মেয়রের দিকে ইঙ্গিত কওে বলেন ব্যবসায়ীক কোন্দলের কারণে ছাত্রলীগ নেতার আল নুর হাসপাতালটিকে জঙ্গি আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন মেয়র।
এসময় মতবিনিময় সভায় কিছুটা হট্টগোল সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মেয়র ইসমাইল বলেন ,আমরা জঙ্গি প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা করছি। অথচ আ’লীগ নেতারাই জঙ্গি সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘুরছে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র ইসমাইল বলেন, বর্তমানে অনেক জামায়াত শিবির এবং হেফাজত ক্যাডার ছাত্রলীগ যুবলীগে ঢুকে পড়েছে। তারা আ’লীগের সিনিয়র নেতাদের আশ্রয়ে আছে।
এক পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ফটিকছড়ির সাংসদ নজিবুল বশর ভান্ডারীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এর পর নজিবুল বশর তাঁর বক্তব্যে বলেন আপনারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে একটি সভায় একে অপরকে আক্রমন করা উচিৎ হয়নি।
এদিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা হলেও এটি মূলত আ’লীগের দলীয় সভায় পরিণত হয়। মতবিনিময় সভা নাম দিলেও মূলত উপজেলা প্রশান কর্তৃক ঘোষিত ব্যক্তিরা ছাড়া উপস্থিত অন্য কেউ বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পায়নি।
সরকারী নিয়ম অনুযায়ী মতবিনিময় সভায় সকল শ্রেনীর মানুষের মতামত গ্রহন করে তা রেজুলেশন আকারে সরকারের উর্ধতন মহলের নিকট পাঠানোর কথা। কিন্তু এ সভায় উপস্থিত বিভিন্ন পেশার মধ্য থেকে মাত্র একজন করে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। উপস্থিত অনেক ইউপি চেয়ারম্যান তাদের মতামত তুলে ধরার সুযোগ পাননি। এনিয়ে অনেকের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়।
এসময় উপজেলা আ’লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী,উপজেলা চেয়ারম্যান এম তৌহিদুল আলম বাবু,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. উত্দম কুমার মহাজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা, উপজেলা আ’লীগ সেক্রেটারী এম সোলেমান বিকম উপস্থিত ছিলেন।