ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

দুর্দশা গুছে যাচ্ছে শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার অধিবাসির!

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

Coxsbazar shapori dip-3
কক্সবাজারের টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপের দৃশ্য এটি। সাগরের করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে দ্বীপটি।

কক্সবাজারের টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ বাংলাদেশের মুলভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সিডর, আইলা ও রোয়ানুর মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়ে দ্বীপটি ক্ষত বিক্ষত।
শাহপরীরদ্বীপ সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশ সাগরের জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ২০১২ সালের জুন মাসে। এর পর থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ। চার বছরেও সড়কটি পুন:নির্মাণ হয়নি। ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কার্যত বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয়েছে দ্বীপটি। পশ্চিমপাড়া অংশে প্রায় ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ ধসে ৭’শত পরিবারের বসতি ও পশ্চিমপাড়া গ্রামটি সম্পূর্ণ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৭’শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এদিকে ভাঙা তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধও মেরামত হয়নি। দ্বীপটিকে বাঁচতে পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবী করছেন স্থানীয়রা।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন হলে শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার অধিবাসির দুর্দশা অনেকটা হ্রাস পাবে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসি জানায়, আকাশে মেঘ আসলেই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটে দ্বীপবাসীর। শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম পাড়া, দক্ষিন পাড়ার দু’ তৃতীয়াংশ সাগরে বিলিন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ দিবা-রাত্রী ভাঙ্গছে এবং সেখানে চলছে জোয়ার ভাটা।

Coxsbazar shapori dip-2
শাহপরীর দ্বীপ। সাগরের করাল গ্রাসে দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দ্বীপটি।

বিগত কয়েক বছরে দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার শতশত ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, কয়েক শত একর জমি সমুদ্র গ্রাস করেছে। হাজার হাজার পরিবার গৃহ হারা হয়ে অনেকেই দ্বীপ ত্যাগ করে জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। শাহ্পরীরদ্বীপ বদর মোকাম এলাকাটি এক সময় দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের বিখ্যাত স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে দেশী-বিদেশী জাহাজ বহিনোঙ্গার করত। ওই সময় সাগরের ভাঙ্গন কবলে পড়ে তা বিলীন হয়ে যায়। শাহপরীর দ্বীপের যে অবস্থা তা বদর মোকামের মত সাগর গর্ভে বিলীনের আশংকা করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) থেকে অমাবস্যার জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দিনদিন তীব্রতর হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটারের সড়কটির শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়া থেকে খাদিয়াখীল পর্যন্ত অংশ বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের ওই অংশ পার হতে হচ্ছে নৌকায় করে। অবশ্য ভাটার সময় পানি কম থাকলে কাদা মাড়িয়ে অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন ওই অংশ। এ নিয়ে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি।

শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমএ হাশেম বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ এখন বিচ্ছিন্ন জনপদ। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ সদরে নিয়ে যাবে ওই অবস্থা নেই। নেওয়ার পথেই মারা যাবে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ হলে লোকজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য সাইক্লোন শেল্টারও নেই। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

Coxsbazar shapori dip-1
টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ দেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সড়কটি এখন বিলীন হওয়ার পথে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীর দ্বীপ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেঙে যায়। এরপর ২০০১ সালে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে আবার বাঁধ ভেঙে শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সাগরে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গত ২০১৫ সালে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙা অংশের আধা কিলোমিটারে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধে প্রতিনিয়ত মাটি, বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভাঙা অন্য অংশ দিয়ে এখন জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধটি জোয়ারে আঘাতে বিলীন হয়। এরপর ওই ভাঙা বাঁধটি নির্মাণের জন্য সাড়ে ৯৭ কোটি টাকা খরচ করা হলেও পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধটি স্থায়ী হচ্ছে না। অমাবস্যার ও পূর্ণিমার জোয়ারের রিং বাঁধটি ধসে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও বাঁধ রক্ষা করা যাচ্ছে না। তবে বাঁধ নির্মান কাজে ব্লক স্থাপন করলেও সাগরের জোয়ারে বাঁধ ভেঙ্গে যায়’।

তবে আগের ব্লক পূনরায় স্থাপন ও সৈকতের বালি মিশ্রিত মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মান করায় বাঁধ রক্ষা করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন,‘ শাহপরীর দ্বীপ রক্ষার জন্য ৬৬ ও ১০৬ কোটি টাকার দুইটি বড় প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তৎমধ্যে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকে (জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ট্রাস্ট ফান্ড) পাঠানো হয়েছে। তা একনেকে অনুমোদনের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে ২.৬৪৫ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাধেঁ সিসি ব্লক স্থাপন করা হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে শাহপরীর দ্বীপে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি’।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print