চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড-মীরসরাই’র মাঝখানে নতুন আরকেটি নতুন বন্দর নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এ বন্দর নির্মাণ বিষয়ক প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সরকারের গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বন্দর তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. খালেদ ইকবাল বুধবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান ।
বন্দরের মুন্সী আব্দুর রউফ অডিটোরিয়ামে “বন্দরের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা” নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, বন্দরের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আগামী ১০ বছরে এখানে যে পরিমাণ আমদানি-রফতানি হবে তা এ বন্দর দিয়ে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে না। তাই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে এক মাসের মধ্যে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পাব। এরপরই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।
বে-টার্মিনাল নির্মার্ণের জন্য জামার্নির হাম্বুর্ক প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ১৭ আগস্ট এ বিষয়ক চুক্তি সই হবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ৮ থেকে ৯ মাস সময় লাগবে। এ বিষয়ে জরিপ করে তারা প্রতিবেদন জমা দিবে। বর্ষার পরই তারা কাজ শুরু করবে।
বন্দরের আমদানি-রফতানি সক্ষমতা বাড়াতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে, ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বন্দরের কাজে জটিলতা তৈরি হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যদি অনিয়ম দুর্নীতি করে থাকে তা খতিয়ে দেখব। তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি সরকার সারাদেশে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিমার্ণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ফেনী, মিরসরাই ও আনোয়ারায় ৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এ ৩টি অঞ্চলই চট্টগ্রাম বন্দরের নিকটে।
তবে এই এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে। পরের ধাপে টেকনো ইকোনোমিক ফিজেবিলিটি স্টাডি করা হবে। এ বন্দরটি হলে ফেনী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সাপোর্ট করা যাবে।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উদ্যোগ, জাহাজ জট, কন্টেইনার জট, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সহ সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেন তিনি। এসময় কিছুদিন আগে হওয়া জাহাজ জটের ব্যাখাও দেন তিনি।
সম্প্রতি জাহাজ-কন্টেইনার জট সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জট দেখা দিয়েছিল। সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কার্যকরী উদ্যোগের কারণে তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা গেছে।
বর্তমানে বহির্নোঙ্গরে জাহাজের স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে জাহাজ জট নেই দাবি করে তিনি বলেন, জট স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে এখন জাহাজ জট নেই।
বন্দরের প্রবৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। যন্ত্রপাতি সংকট কাটানোর জন্য এরই মধ্যে বেশকিছু ভারী যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।
বন্দরের যন্ত্রপাতি সংকট কাটাতে কিছুদিনের মধ্যে ১২’শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য ওপেন টেন্ডার আহবান করা হবে। এসব যন্ত্রপাতি বন্দরে গেলে সামনে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করি।
লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণে বন্দরের অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সিডিএ বলছিল এ ফ্লাইওভার তৈরিতে বন্দর অর্থায়ন করতে। কিন্তু বন্দর এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। এটা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আমাদের বলা হয়েছে। কেননা আগামী ৫ বছরে বন্দরে ২৮ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হবে। তাই এখন বন্দরের বাইরে কোন টাকা দেয়ার সুযোগ নেই।
সভায় বন্দরের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান করেন বন্দরের সদস্য (অ্যাডমিন এন্ড প্ল্যানিং) জাফর আলম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বন্দর সদস্য প্রকৌশল কমডোর জুলফিকার আজিজ, সদস্য অর্থ কামরুল আমিন, পরিচালক পরিবহন গোলাম সরওয়ার, প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নাজমুল হক, পরিচালক প্রশাসন সাদেকা বেগম, সচিব ওমর ফারুক, উপসচিব আজিজুল মওলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।