মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেওয়ায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ার বক্তব্যের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে শোকজ (কারণ দর্শানো) করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) জ্যোতিময় নন্দী স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিটি বিকালে ফ্যাক্সে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে।
এতে উল্লেখ্য করা হয়, আপনার (মেয়র নাছির) আনিত অভিযোগ সমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। যার প্রমাণ প্রদান অবশ্যক।
এর প্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা আপনার কাছে ঘুষ চেয়েছে। এবং পাজেরো দাবী করেছে কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতা সৃষ্টি করেছেন তা সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী ৭ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা গেলো।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক শোকজ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আবদুল মালেক বলেন, ‘তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। হি মাস্ট গিভ এক্সপ্লানেশন, পরিস্কার কথা। আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে, মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা তার কাছে জিপ চেয়েছে। তিনি যার কথাই বলুক, সেটা উনি বলুক।’
তিনি বলেন, ‘এটার সত্যতা যা আছে, উনি যে কথাগুলো বলেছেন। উনি একজন রাজনৈতিক নেতাও, উনি একজন মেয়র। সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই সেটেল করুক। আমরা উনার কাছে আজকে ব্যাখ্যা চাচ্ছি। ব্যাখ্যা চাচ্ছি আজকেই।’
বুধবার নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম নগর সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র নাছির বলেন, ‘দাবি মতো কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত, সেখানে তা না দেওয়ায় এসেছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা। আমাকে বলা হলো- করপোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেওয়া হবে থোক বরাদ্দ হিসেবে, তবে তার জন্য ৫ শতাংশ করে দিতে হবে।’
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সভায় যোগ দিতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে নাছিরও এসেছিলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকরা বুধবারের বক্তব্যেব বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির বলেন, ‘কথাবার্তা চলছে চলুক। আমার মত করে আমি বলব। আমি মিটিংয়ে আসছি, মিটিংয়ের পর কিছু দাফতরিক কাজ ছিল সেগুলা করেছি।’
ব্যাখ্যা চাওয়ার চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র নাছির বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোন চিঠি পাইনি। আমাকে কিছু বলা হয়নি।’
চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এটা কখনও শুনিনি, এটা বলতে পারি, মিনিস্ট্রির কাজ ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন) করানো। ডেভেলপমেন্ট করাতে হলে টাকা দেবে সরকার। মিনিস্ট্রি তো তার নিজস্ব ডেভেলপমেন্টের স্বার্থে সরকারের কাছে এ সব ডিপিপিগুলো পাঠাবে। আমাদের চেয়ে অনেক সময় ওনাদের তাড়া বেশি থাকে। টাকাটা এনে দিতে পারলে ঢাকার কাজ বেশি হবে, রাজশাহীর কাজ তাড়াতাড়ি হবে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে এ ধরণের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, এটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এ ধরণের অভিযোগ যদি তিনি (চট্টগ্রামের মেয়র) করে থাকেন তবে অবশ্যই এটির তদন্ত হওয়া উচিত।’