বৌদ্ধ ভিক্ষু মংসই উ হত্যাকাণ্ডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বান্দরবান রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তে বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক সমাবেশে যোগ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যায় তার স্বজনরাই জড়িত থাকতে পারে।’
বান্দরবানের বাইশারীতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে রবিবার বিকেলে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিষদ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু ইয়ং এসোসিয়েশনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্বরাষ্টমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠন দুটির সদস্যরা।
মহাথের উচহ্লা ভান্তে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বললেন ভিক্ষু হত্যায় স্বজনরা জড়িত? তীব্র জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ ফসকে বলবেন কেন, তিনি কোনো ছোট লোক নাকি? তিনি দেশের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার প্রতিটি কথা সারাবিশ্ব শুনে। তাই আমরা চাই মুখ ফসকে যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো কথা না বলেন। আমরা চাই তার প্রতিটি প্রদক্ষেপ হবে লোহার মতো শক্ত।’
ভিক্ষু হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করে মহাথের উচহ্লা ভান্তে বলেন, ‘আমরা চাই, প্রতিটি আইনি ব্যবস্থায় বিশ্ববাসী যেন বুঝতে পারে বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা শান্তিতে আছে।’
সরকার ইচ্ছা করলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আসামিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের এই অধ্যক্ষ।
বান্দরবান রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মহাথের উচহ্লা ভান্তের নেতৃত্বে বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ রাজগুরু বিহার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয় বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ শত শত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ।
উচহ্লা ভান্তে সবশেষে বলেন বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে নরহত্যা হচ্ছে। খ্রিস্টান ফাদারকে হত্যা করছে, হিন্দু পুরোহিতকে মারছে, নিরীহ সাংবাদিকদের হত্যা করছে। এখন বৌদ্ধ জ্ঞানী ভিক্ষুকে হত্যা করা হলো। এগুলো কারা মারছে, আমরা জানি না। তাই আমরা নিরাপত্তা চাই, শান্তি চাই।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় নেতা মংমং চাক ও ভিক্ষুর আত্মীয় থোয়াইগ্যা চাক।
এদিকে ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে জেলার লামা উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার ভোররাতে কোনো একসময়ে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের (ক্যায়াং) প্রধান ভিক্ষু মংসই উ (৭৮) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকালে পূজারীরা ভিক্ষু’র জন্য খাবার নিয়ে বিহারে গিয়ে লাশ দেখতে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
এ ঘটনায় ভিক্ষুর ছেলে চিংসাউ চাক শনিবার সন্ধ্যায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় চাকমা সম্প্রদায়ের একজনসহ মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন— হ্লামং চাক (৩২), জিয়া উদ্দিন (২৮) ও রহিম (২৯)।