রক্তপাত-হানাহানি-সংঘাতের বিপরীতে স্বদেশ ও বিশ্বে শান্তির আবহ তৈরি এবং একটি স্বস্তিময় মানবিক বিশ্বের স্বপ্ন পূরণে নৈতিকতাশ্রয়ী সাংস্কৃতিক জাগরণ কামনার মধ্য দিয়ে হিজরি নতুন বছর ১৪৩৮ কে বরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিগত দিনের গ্লানি-অপ্রাপ্তি থেকে বেরিয়ে এসে সৃজনধর্মী কাজে ও জনকল্যাণে ব্রতী হবার প্রত্যয়ে হিজরি বছর ১৪৩৭ কে আবেগঘন বিদায় জানানো হয়েছে।
হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ১ মহরম (৩ অক্টোবর) সোমবার হিজরি নববর্ষকে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যে নগরীর ডিসি হিলে (নজরুল স্কয়ার) বর্ণাঢ্য ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
হামদ, না’তে রাসুল (দ.), গজল, কাউয়ালি, মাইজভাণ্ডারী সঙ্গীত, মরমী, দেশাত্মবোধকসহ নানা উজ্জীবনধর্মী গান পরিবেশনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মুখরিত হয়ে ওঠে ডিসি হিল প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী ও খুদে শায়েরবৃন্দের কণ্ঠে মোহনীয় সুরের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হাজারো শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ফাঁকে ফাঁকে চলে আলোচনা।
আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন হিজরি নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পীরজাদা মাওলানা মুহাম্মদ গোলামুর রহমান আশরফ শাহ্। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
মুখ্য আলোচক ছিলেন বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী। আলোচক ছিলেন গবেষক ও সংগঠক অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান ঢাকা মশুরিখোলা দরবার শরীফের সাজ্জাদনশীন পীরে তরিকত মাওলানা শাহ আহছানুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ একরাম হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হিজরি নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিকী।
বর্ষবরণের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, হিজরি সন ও তারিখ অনুযায়ী দেশের ৮০ ভাগ আচার অনুষ্ঠানাদি পালিত হয়ে আসছে। বাংলা নববর্ষ ও খ্রিস্টিয় নববর্ষ এদেশে সাড়ম্বরে পালন করা হলেও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হিজরি নববর্ষ অনেকের অলক্ষ্যে চলে যায়। বক্তারা ১ মহরম হিজরি নববর্ষের দিনটি ঐচ্ছিক ছুটির পরিবর্তে সরকারি ছুটি ঘোষণা এবং হিজরি নববর্ষ আয়োজনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, সর্বনাশা মাদক আজ দেশের অলি-গলিতে ও ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। সম্ভাবনাময়ী শিক্ষিত যুব সমাজের বড় অংশ মাদকের নেশায় ডুবে থেকে নিজেদেরকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। মাদকের ছোবল থেকে যুব তরুণদের বাঁচাতে এর উৎপাদন-বিপণনের জায়গায় শক্তভাবে হাত দিতে হবে। এজন্যে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। থাইল্যান্ড-ফিলিফাইনের মতো মাদক নির্মূলকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশ ও জাতিকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হবে।
বক্তারা সাইবার ক্রাইম ঠেকানো এবং ইসলামী মনীষীদের জীবন-কর্মের আলোকে পাঠ্যপুস্তক ঢেলে সাজানো দরকার বলে মত দেন। যুব সমাজের নৈতিকতার উন্নয়ন ছাড়া অবক্ষয় অস্থিরতা থেকে রেহাই মিলবে না বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাদক রুখতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। জাগরণধর্মী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জোয়ারে অপসংস্কৃতি হটবেই। মুখ্য আলোচক কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় ও জাতিসত্তার শেকড়। শুদ্ধতম মননশীল সংস্কৃতিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পথ মসৃণ করতে হবে। চট্টগ্রামের হিজরি বর্ষবরণ বুনিয়াদি বাঙালি নৈতিকতাধর্মী সংস্কৃতি তুলে ধরার আয়োজন বলেই তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, দেশে ৬০ ভাগ সরকারি ছুটি হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঘোষিত হলেও হিজরি নববর্ষ উদযাপনে সরকারি ও বেসরকারি বড় উদ্যোগ এখনও চোখে পড়ে না। এক্ষেত্রে শুধুই ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হল শুদ্ধতম ইসলামী সংস্কৃতির জাগরণ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম আজ সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। আহলে বায়তে রাসুল (দ.) স্মরণে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল ও হিজরি নববর্ষ অনুষ্ঠানের কারণে চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধি আরো বেড়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন ও মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রেজভী। বিশিষ্ট ব্যক্তি ও হিজরি নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের দায়িত্বশীলদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তৈয়্যব আলী, অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর, অধ্যাপক সৈয়্যদ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আজাহারী, সৈয়দ মুহাম্মদ হোসেন, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ নুুরুল আবছার, মুহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম পুতুল, প্রকাশনা ও মিডিয়া সচিব আ ব ম খোরশিদ আলম খান, আ.ন.ম তৈয়ব আলী, মুহাম্মদ আবদুর রহিম, মাওলানা এম এ মাবুদ, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ইয়াসিন হোসেন হায়দরী, মুহাম্মদ ফজলুল করিম তালুকদার, মাওলানা এম এ মুস্তফা হেজাজী, মুহাম্মদ শাকুর মিয়া, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ মহি উদ্দিন চৌধুরী, মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন ইমন, মুহাম্মদ শফিউল আলম শফি, মুহাম্মদ আবদুল করিম সেলিম, জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী, মাহবুবুর রহমান হাবিবী, এডভোকেট ইকবাল হাসান, শাহজাদা আবদুল কাদের চাঁদ মিয়া, মুহাম্মদ ইসকান্দর রশিদ, মাওলানা সোহাইল উদ্দিন আনসারী, মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, জি এম শাহাদাত হোসেন মানিক, এইচ এম শহীদুল্লাহ, মুহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান, মুহাম্মদ নিজামুল করিম সুজন, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন সিদ্দিকী, মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, সৈয়দ মুহাম্মদ হোবাইব. দিদারুল ইসলাম কাদেরী. মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ। সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি -কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়।