Search
Close this search box.

ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা ও মহিষাসুর বধ

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

rajibdeysarker_1317562841_3-33
দেবী দূর্গা

শারদীয় শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা বাঙালী হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূজা প্রতি বৎসর শরৎকালে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব আবহমান বাংলার সংস্কৃতির একটি অংশ। এই দুর্গোৎসব শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালীর প্রাণের উৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দে সকলের মন-প্রাণ উদ্বেলিত হয়। আমাদের এই দুর্গোৎসবে সকলের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, বৈষম্য, মতানৈক্য ও উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভূলে সবাই মিলিত হয়। সকলের অবাধ মহামিলনই সার্বজনীন দুর্গাপূজার বিশেষ রূপ। এতে মানুষ-মানুষের মধ্যে সৌহাদ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ে এবং সকল বৈষম্যতা দুর হয়। পূজার মাধ্যমে মানুষের মনকে পবিত্র ও সুন্দর করে তোলে এবং ভ্রাতৃত্বের ভাব জাগরিত হয়। আর পূজার মাধ্যমেই দেব-দেবীর প্রতি একাগ্রতা ও ভক্তি জাগে এবং আনন্দ লাভ হয়।

দূর্গা দেবীর পূজা বৎসরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবার করা হয় কৃষ্ণমার্গে অর্থাৎ শরৎ ঋতুতে শরৎকালীন শারদীয় দুর্গা পূজা এবং দ্বিতীয়বার করা হয় শুক্লমার্গে অর্থাৎ বসন্ত ঋতুতে বাসন্তী পূজা। কৃষ্ণমার্গে দেবতারা নিদ্রিত থাকেন বিধায় শারদীয় দুর্গা পূজার বোধনের প্রয়োজন হয়। শুক্লমার্গে দেবতারা জাগরণ থাকেন বিধায় বোধন পূজার প্রয়োজন হয় না। মূলতঃ সত্যযুগে দুর্গা পূজা শুরু হয়েছিল বসন্তকালে, সেই পূজাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। হিন্দু পুরাণে আছে- ত্রেতায় রামায়ণ যুগ হতে শরৎকালীন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। দৈত্যরাজ রাবন যখন রামের স্ত্রী সীতাকে হরণ করে লংকায় নিয়ে যান, তখন রাজা রাম স্ত্রী সীতাকে দৈত্যরাজ রাবণের বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করার মানসে ১০৮টি নীল পদ্ম ও ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করছিলেন। রামায়ণে বর্ণিত আছে- রাজা রাম দেবী দুর্গার পূজার ১০৮টি নীল পদ্মের মধ্যে ১০৭টি যোগাড় করেছিল। নীল নয়নধারী রাম উপায়ন্তর না দেখে নিজের একখানি চোখ দান করতে উদ্যত হয়েছিলেন। শ্রীরামের ভক্তিতে দেবী দুর্গা তুষ্ঠ হয়ে স্বয়ং শ্রীরামকে চোখ দান করা থেকে নিবৃত্ত করেন। শ্রীরাম বসন্ত কালের পরিবর্তে শরৎকালে দুর্গা পূজা করেছিলেন বলেই এ পূজাকে অকাল বোধন বলা হয়।

হিন্দু পুরানে আছে- ভগবান ব্রহ্মা দৈত্যরাজ মহিষাসুরের কিছু ভাল কাজে সন্তুষ্ট হয়ে বর দিতে চেয়েছিলেন। তখন মহিষাসুর অমরত্ব বর প্রার্থনা করেছিলেন। ব্রহ্মা সরাসরি অমরত্ব বর না দিয়ে তাকে এই বর দিলেন যে, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের কোন পুরুষের হাতে মহিষাসুরের মৃত্যু হবেনা। যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন স্বয়ং ব্রহ্মার নিকট এমন বর পেয়ে মহিষাসুর ধরাকে তুচ্ছ ভাবতে শুরু করে। এই মহিষাসুরের অত্যাচার প্রবল দিনদিন বেড়েই চলছে। এমনকি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করার জন্য দেবতাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে দিল। তার প্রবল অত্যাচারে স্বর্গের দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দেবরাজ ইন্দ্রকে পরাজিত করার পর মহিষাসুরের অত্যাচারের প্রতিরোধ করা দেবতাদের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। এভাবে মহিষাসুর অপরাজেয় এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। এরপর মহিষাসুর স্বর্গের দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারণ করে নিজেই স্বর্গরাজ্য অধিকার করে নেয়। দেবতারা অনন্যোপায় হয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। তারা ব্রহ্মার দেওয়া কঠিন বরের ভেতরেই আলো দেখতে পান।

ব্রহ্মা বর দেওয়ার সময় বলেছিলেন- কোন পুরুষের হাতে মহিষাসুরের মৃত্যু হবে না। নারীর হাতে মহিষাসুরের পরাস্ত হওয়ার কোন বাধা নেই। ব্রহ্মার একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় শিব ও অন্যান্য দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে তারা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে করুণ দুর্দশার কথা বিস্তারিত বর্ণনা করেন। তাদের এ মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব এর আহবানে দশভূজা যে নারী মূর্তীর আবির্ভাব হলো, তিনিই দেবী দুর্গা। এই মহা শক্তিশালী মহিষাসুরের সাথে দুই হাতে লড়াই করা সম্ভব নয় বলে দেবী দুর্গাকে দশভূজারূপে কল্পনা করা হয়েছে। দুর্গাদেবী আবির্ভূত হওয়ার পর তার দশ হাতে মরণাস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করে দেওয়া হলো। শিব দিলেন ত্রিশূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, ইন্দ্র দিলেন তীর ধনুক, তরবারি ঢাল, বিষধর সর্প, তীক্ষè কাটাওয়ালা শঙ্খ, বিদ্যুৎবাহী বজ্রশক্তি এবং একটি পদ্ম ফুল।

আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা এবং দৈত্যরাজ মহিষাসুরের মধ্যে দশদিনব্যাপী মহাযুদ্ধ হয়েছিল। এই মহিষাসুরকে পরাস্ত করা রীতিমত অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। কারণ সে মহিষাসুর মায়ার খেলা জানত। দুর্গাকে বিভ্রান্ত করতে সে একেকবার একেক জন্তু জানোয়ারের রূপ ধারণ করেছিল। দেবী দুর্গার জন্য এই যুদ্ধ করা ভীষণ কঠিন হয়ে উঠে। যখন যুদ্ধে দেবী দুর্গা কর্তৃক অসুর ক্ষত হয়, তখন অসুরের ক্ষত স্থান থেকে রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়া মাত্র সেখান থেকে একই চেহারার আরেকটি অসুরের জন্ম হচ্ছিল। এভাবে দুর্গার তরবারির কোপে রক্তাক্ত অসুরের প্রতিটি রক্ত বিন্দু থেকে শত সহস্র অসুরের জন্ম হলো এবং দেবী দুর্গার দিকে ধেয়ে এলো। তখনই দেবী দুর্গা অন্য মূর্তী ধারণ করলেন। সে মূর্তীর রূপ হলো আরো ভয়ঙ্কর। লম্বা জিভ, চার হস্ত কালী মূর্তী। যার প্রধান কাজই ছিল অসুরের রক্তবীজ মাটিতে স্পর্শ করার আগেই লম্বা জিভ বের করে চুষে খেয়ে ফেলা। এভাবেই রক্তবীজ থেকে অসুরের উৎপত্তি বন্ধ হয়ে গেল। দুর্গা দেবী এই অসুরটিকে তিনবার বধ করেন। প্রথমবার অষ্টভূজা উগ্রচন্ডা রূপে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার দশভূজা রূপে। যুদ্ধের দশম দিনে অসুর মহিষাসুর রূপ নিয়েছিল। উপায়ান্তর না দেখে মহিষের দেহ থেকে বেরিয়ে এলো বিশাল দেহী মানুষের রূপে। তখনই দেবী দুর্গার হাতের ত্রিশূল মহিষাসুরের বক্ষ্য ভেদ করল। এদিকে মহিষাসুর রাত্রে ভদ্র কালীর মূর্তীর আরাধনা করার স্বপ্ন দেখেন। দুর্গা দেবীর কাছে এসে মহিষাসুর বলেন- হে দেবী! আপনার হাতে আমার মৃত্যু হলে কোন দুঃখ নাই। কিন্তু আপনার সাথে আমিও যাতে পূজিত হতে পারি তারই কৃপা দান করুন। তখনই দেবী দুর্গা বললেন- উগ্র চন্ডা, ভদ্রকালী ও দেবী দুর্গা এ তিন মূর্তীতে তুমি সব সময় আমার পদলগ্ন হয়ে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের পূজা পাবে। মহিষাসুরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালে শান্তি ফিরে এলো। মাতৃশক্তিতে উদ্বোধিত হয়ে দেবী ভগবতী আমাদের কাছে অসুর মর্দিনী ভক্ত তোষিনী রূপে আবির্ভূতা হয়েছেন। স্বর্গের দেবতারা দেবী দুর্গার নামে জয়ধ্বনি করলেন।

লেখক: শ্রী বিবেকানন্দ নাথ, স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

সর্বশেষ

ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়েঃ তাজুল ইসলাম

দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন হাসিনা, সদলবলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পার্কে

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আড়াই কোটি বিদেশী মুদ্রাসহ যাত্রী আটক

বেক্সিমকোর সব সম্পত্তি দেখভাল করতে রিসিভার নিয়োগের লিখিত আদেশ

অপরাধী হলেও যেন তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হয়, ঢাবি-জাবির ঘটনা দুঃখজনকঃ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শিল্পী সংঘের ‘অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কার কমিটি’র প্রধান তারিক আনাম

নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছে বিএনপি

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print