চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে সোমবার দিবাগত জন্ম নেয়া জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম শাখার নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, জন্ম নেয়া নবজাতকের বাবা-মা দুজনই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। কিন্তু সিএসসিআর হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তারদের অবহেলা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল ১০ঘণ্টা বয়সের ওই নবজাতককে।
একজন চিকিৎসক দম্পতির সন্তান হয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকের প্রতি যথাযথ দায়িত্বপালন না করে জীবিত নবজাতককে মৃত বলে সার্টিকিটে প্রদান করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যাব অবিলম্বে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে কঠিন ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী নেতৃবৃন্দ বলেন- ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলি প্রতিনিয়ত দায়িত্বপালনে গাফলতি ও অবহেলার কারনে প্রতিদিন বিপুল পরিমান রোগীর অকাল ও অপমৃত্যু হলেও চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)র অবৈধ চাপে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আর এখন যখন একজন চিকিৎসক দম্পতির সন্তানকে এভাবে দায়িত্ব অবহেলা ও অবজ্ঞা করে জীবিতকে মৃত ঘোষনা করে প্যাকেট করলো তাতে হয়তো পুরো চিকিৎসক সমাজের বিবেক কি জাগ্রত হবে না? নাকি তারা আবারও তাদের সেই পুরোনো অভ্যাস লাশের গায়ে পা রেখে রোগীদেরকে জিম্মি করে চিকিৎসকদের অবহেলাকে আমলে নিতে দিবে না। রোগী প্রতারিত হলে ও ক্ষতিগ্রস্থ হলে এবং অপচিকিৎসায় ও অবহেলায় মৃত্যু হলে তার প্রতিকার ও ক্ষতিপুরণ পাওয়া মৌলিক অধিকার। সেখানে একজন নাগরিকের সে অধিকার খর্ব করার হীন প্রয়াস শুধু মাত্র নিন্দনীয় নয় এটা চরম বর্বরতার সামিল এবং আদিমযুগে “জোর যার মল্লুক তার” সে স্লোগানে প্রত্যাবর্তনের সামিল।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চিকিৎসা পেশা একটি মহান সেবা ধর্মী পেশা হলেও বর্তমানে কিছু কিছু চিকিৎসক এ মহান পেশাকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে কোটিপতি হবার বাসনায় লিপ্ত। সেকারনে রোগীর সেবা, মানবতার সেবার চেয়ে অর্থই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁিড়য়েছে। ফলে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক ও সুযোগ সুবিধা থাকলেও রোগীরা সেখানে নুন্যতম চিকিৎসা সেবা পায় না। রোগীদেরকে ক্লিনিক ও চেম্বারে যেতে বাধ্য করা হয়। আর যে কোন মানুষ রোগাক্রান্ত হলেই রোগী হলেই আগে পরামর্শ দেয়া হয় প্যাথলজিকাল টেস্ট ও অপারেশন। কারন এতে তাদের লাভ বেশী। যার কারনে প্যাথলজিকাল ল্যাব গুলি ব্যাঙের ছাতার মতো শহর, গ্রাম সর্বত্র ছাড়িয়ে পড়েছে। আর ক্লিনিকগুলি নামমাত্র সেবা দিয়ে গলা কাটা বিল আদায় করছে। বিএমএসহ সরকার ও বিরোধীদলের সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবি সংগঠনগুলির দৌরাত্ত্য, একচেটিয়া প্রভাবের কারনে এখানে রোগীদের মানম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কোন প্রকার নজরদারি করার সাহস পর্যন্ত নেই। অনেক জায়গায় সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগ বিএমএর অধিন্যস্ত সংগঠনের মতো আচরন করেন। ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে চিকিৎসার জন্য ভিড় জমায়।
নেতৃবন্দ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে এ ধরণের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য ক্লিনিক, প্যাথলজিকাল ল্যাবসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠানে কঠোর নজরদাবির দাবী জানান।
স্বাস্থ্য সেক্টরে কমিশন প্রথা, উপহার প্রথা বাতিলসহ রোগী/ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় কঠোর আইনী প্রতিকার এবং সিবিএ সংগঠনের মতো বিএমএর অযাচিত হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের দাবী জানান। অন্যদিকে বিএমএ চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের স্বার্থকে আরো সুরক্ষা করার জন্য সরকারকে দিয়ে রোগী সুরক্ষা আইন তৈরীর চাপ দিচ্ছে। যা সম্পুর্ন অনৈতিক ও অমানবিক। কারন রোগী সুরক্ষা আইন হতে হবে রোগীদের কল্যানে, কোন ভাবে চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের স্বার্থকে সুরক্ষা দিয়ে নয়। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রোগী সুরক্ষা আইনকে সংশোধন করে নতুন প্রস্তাবনা তৈরীর দাবী জানান।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু প্রমুখ।