মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাংলাদেশের বিরাট ভুল বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন ভারতের দিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার।
বুধবার খবরটি প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
ড. বুরাক আকচাপার বিবিসিকে বলেন, ‘এই ফাঁসি কার্যকর করায় তুরস্ক ক্ষুব্ধ। এ ক্ষোভ প্রকাশ করাটা তুরস্কের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। তুরস্ক নিজামীকে কোনো যুদ্ধাপরাধী নয়, বরং একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই দেখছে। মৃত্যুদণ্ড এমনিতেই কোনো ভালো সাজা নয়–আর একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো তো কিছুতেই মানা যায় না। অমুক কারণ কি তমুক কারণ দেখিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতাকে যদি হত্যা করা হয়– তাহলে আমাদেরও কিন্তু অবশ্যই ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে। তবে প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত অধিকারের নয়– আমাদের মূল কথাটা হলো এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ কিন্তু বিরাট একটা ভুল করেছে।’
বাংলাদেশের নিজস্ব একটি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তুরস্ক কেন এত কঠোর অবস্থান নিয়েছে, দিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপারের কাছে তা জানতে চাইলে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘তুরস্কের এই কঠোর অবস্থান সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত।’
ড. আকচাপার আপাতত ঢাকাতেও তাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম তদারকি করছেন।
‘একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো যে কখনোই সমীচীন নয়– আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিটা স্পষ্টভাবে জানানোর প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের মানুষকে আমরা বন্ধুর মতো, ভাইয়ের মতো ভালোবাসি বলেই তাদের এই বার্তাটা দিতে চেয়েছি যে, এভাবে কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা যায় না।’
নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আলবদরের মতো একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া। যারা যুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ বা গণহত্যায় লিপ্ত ছিল। নিজামীর বিচারও হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এটা কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটা বিষয়ে তুরস্কের হস্তক্ষেপ করার শামিল?
এ প্রশ্নের জবাবে আকচাপার বলছেন, ‘কোনো একটা জিনিস যদি আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, তাহলে আমাদেরও কিন্তু অধিকার আছে তা প্রকাশ করার।’
‘আমরা বাংলাদেশকে বন্ধু বলে মনে করি বলেই কিন্তু আমরা মন খুলে কথা বলছি। যাদেরকে আপনি একই পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন, তাদের বেলায় কখনো কখনো কিন্তু চুপ করে থাকার চেয়ে বড় প্রতারণা আর কিছু হয় না,’ বলে জানান আকচাপার।
বাংলাদেশের মানুষদের একটা বিরাট অংশ বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে এসেছেন- বিশেষ করে যুদ্ধের সময় যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের সেই অন্যায়ের একটা ক্লোসার দেওয়ার অধিকার বাংলাদেশের এই জনগণের থাকার প্রশ্নটাকে তুরস্ক কীভাবে দেখছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে আকচাপার বলেন, ‘বাংলাদেশের কী অধিকার আছে না-আছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাই না। তুরস্ক তাকে বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই গণ্য করছে, কোনো যুদ্ধাপরাধী বলে মনে করছে না।’
তাহলে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার ভিক্টিমরা কীভাবে বিচার পাবেন?
এ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাবে তিনি বলেন, ‘টাইম ইজ দ্য বেস্ট হিলার, অর্থাৎ সময়ের চেয়ে ভালো উপশম আর কিছু হতে পারে না।’