মিস ফটোসুন্দরী, মিস বাংলাদেশ, মিস ওয়ার্ল্ড কতোরকম সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী। কিন্তু মিস হ্যামার স্ট্রেংথ? এই নামটিই নতুন। কেউ কখনো এই নামটিই শুনেছেন কি-না সন্দেহ। গতানুগতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার বাইরে শরীর ও মন সুস্থ রাখার ভিন্নধর্মী মিস হ্যামার স্ট্রেংথ প্রতিযোগিতা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। আর এই প্রতিযোগিতার ‘হ্যামার স্ট্রেংথ-২০১৬’ খেতাব অর্জন করে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারা দেশেই আলোচিত চট্টগ্রাম প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রামিশা ইবদিতা কবির।
নিজেকে ফিট রাখতেই রামিশা শরীর চর্চার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রামের ব্র্যান্ড জিম হ্যামার স্ট্রেংথ-এ। একজন জিম মেম্বার হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি এখন ‘মিস হ্যামার স্ট্রেংথ’। অসাধারণ এই সাফল্য অর্জনকারী মেধাবী তরুনী রামিশা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদকের সাথে। তার স্বাক্ষাতকার ভিত্তিক এই প্রতিবেদনটি পাঠক ডট নিউজ এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল।
প্রতিবেদক: জিম করতে এসে আপনি এখন আলোচিত। জিতে নিয়েছেন মিস হ্যামার স্ট্রেংথ খেতাব। আপনার অনুভুতি কেমন?
রামিশা: মিস হ্যামার স্ট্রেংথ খেতাব পাওয়াটি আমার জীবনের বড় একটি অর্জন। এই প্রাপ্তির বিষয়টি কখনো চিন্তাও করিনি। কিন্তু বিচারকদের সুচিন্তিত রায়ে এই অর্জন আমার কাছে স্বপ্নের মতো। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে প্রথমবারের মতো র্যাম্প মডেলদের মতোই ফ্যাশন ক্যাটওয়াকে অংশ নেওয়া আমার জীবনে প্রথম অনেক বড় একটি অভিজ্ঞতা।
এ ছাড়া প্রতিযোগিতার প্রয়োজনে মাসব্যাপী গ্রুমি-এ শিক্ষনীয় ছিলো অনেক কিছুই। এই অর্জনকে আমি কোনভাবেই ছোট করে দেখতে রাজি নই। এই প্রাপ্তি আমার পুরো জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি হ্যামার স্ট্রেংথ-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ রুম্মান আহাম্মেদ এবং মাসব্যাপি গ্রুমিং-এর মাধ্যমে আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তৈরি করার জন্য দেশখ্যাত মডেল ও কোরিওগ্রাফার খালেদ হোসাইন সুজনের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
প্রতিবেদক: প্রতিযোগিতা ঘিরে আপনার যাপিত জীবনে এই অর্জন ভালো-মন্দ কেমন প্রভাব ফেলছে?
রামিশা: যে কোন কিছুতেই ভালো মন্দ দুটি দিকই থাকে। এই প্রতিযোগিতাটিও ব্যতিক্রম কিছু নয়। প্রতিযোগিতাটিকে অনেকে ভালোচোখে দেখছে, অনেকে সমালোচনা করেছে। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে এই অর্জনটাকে আমি দারুনভাবে উপভোগ করছি। আমার বাবা মাসহ আমার পরিবারের সমর্থন, বন্ধু শুভাকাঙ্খিদের উৎসাহ অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছি আমি রীতিমত। এই আয়োজনটি ছিলো সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল। এর থেকে জীবনের শিক্ষনীয় ছিলো অনেক কিছুই। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমার শারিরীক সক্ষমতার পাশাপাশি আমার মন ও মানষিক শক্তিও প্রবলভাবে বৃদ্ধি করেছে।
প্রতিবেদক: জিম বা শরীরচর্চা কেন? আপনি বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?
রামিশা: শারিরীকভাবে কর্মক্ষম এবং সুস্থ থাকার জন্য ফিট থাকাটা জরুরী। শারিরীক ও এবং মানষিক সুস্থতার জন্য শরীরচর্চা। তবে মেয়েদের শরীর চর্চার জন্য জিম বা ফিটনেস সেন্টারের উপযুক্ত পরিবেশও একটি বড় বিষয়। চট্টগ্রামে মেয়েদের শরীর চর্চার জন্য আগে পরিবেশ সম্মত কোন ফিটনেস সেন্টার ছিলোনা। কিন্তু হ্যামার স্ট্রেংথ সেই পরিবেশটা তৈরি করে দিয়েছে। তাদের অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট, ইয়োগা প্রশিক্ষনসহ শরীর ও মনের সুস্থতার নানা আয়োজন আমাকে শরীর চর্চায় আগ্রহী করেছে। আর মিস্টার এন্ড মিস হ্যামার স্ট্রেথ প্রতিযোগিতাও একটি বড় উদ্যোগ। আমি এমন আয়োজন ও উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
প্রতিবেদক: আপনার স্কুলজীবন ও পরিবার সম্পর্কে কিছু বলেন
রামিশা: আমার বাবা একেএম হুমায়ুন কবীর। পেশায় একজন ব্যাংকার। কর্মরত আছে এনসিসি ব্যাংকে। মা রায়হানা আরজুমান্দ একজন স্কুল শিক্ষিকা। আমরা তিন বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার ছোট বোন পড়ছে নবম শ্রেণীতে এবং সবচেয়ে ছোটবোনটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিলো চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল থেকে। এখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে এখন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছি।
প্রতিবেদক: আপনি কি মডেলিং বা মিডিয়াকে কাজ করতে আগ্রহী?
রামিশা: না। আমার আসলে এই ধরনের ইচ্ছে নেই। এই মুহুর্তে আমার পড়ালেখাটাই মুখ্য। আমি পড়ালেখাতেই শতভাগ মনযোগ দিতে চাই।
প্রতিবেদক: আপনার স্বপ্ন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কেমন?
রামিশা: আমি বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ৫ম সেমিস্টারে অধ্যায়ন করছি। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের ইচ্ছে আছে আমার। একই সাথে আমি আগামী দিনগুলোতে বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে চাই। সফলতার সাথে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভালো একজন দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে ভুমিকা রাখতে চাই। আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই। নিজে খুশি থাকতে চাই। আমার আশেপাশের মানুষগুলোকেও সুখী ও খুশি দেখতে চাই।
রামিশার ভালো মন্দ
রামিশা পড়ালেখাই তার নেশা। শরীরচর্চা, ইয়োগা তার শারিরীক ও মানষিক সুস্থতার অনুষঙ্গ। ভালোবাসেন পরিবার, বাবা মাকে। সময় পেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরোঘুরি করতে পছন্দ করেন। অবসরে বই পড়েন। বিখ্যাত লেখকদের ইংরেজী বইগুলো পড়তে সাচ্ছন্দ বোধ করেন। পোষাকের মধ্যে শাড়ি তার খুবই পছন্দ। যদিও এখনো নিজে নিজে শাড়ি পড়তে পারেন না। মায়ের সাহায্য নিয়ে শাড়ি পড়েন। প্রিয় রং নীল। ভালোবাসেন রান্না করতেও। খেতে ভালোবাসে পিৎজা, ম্যাক্সিকান ফুড। স্বপ্ন দেখেন একজন ভালো মানুষ হওয়ার।