ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

টেস্টের অভাবে অজানা থেকে যাচ্ছে সংক্রমণ পরিস্থিতি, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে ১২ মিনিট

.

দেশে প্রতিদিন যতোজন ব্যক্তির করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে নানা যাচাই-বাছাইয়ের কারণে তারমধ্যে সীমিত সংখ্যকেরই টেস্ট করা হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে করোনা কতটা সংক্রমিত হয়েছে বা কতটা বিস্তৃত হয়েছে তা অজানা থেকে যাচ্ছে। একই কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা কী- সে সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। স্বল্প পরিসরে এই করোনা টেস্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখনই ব্যাপকহারে টেস্ট শুরু করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে না পারলে বাংলাদেশে এই মহামারি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাবে।

করোনার নানা লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করার জন্য রাজধানীর রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) যোগাযোগ করছেন, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষেরই এই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক মানুষকে দোরে দোরে ঘুরতে হয়েছে, এমনকি তদবির পর্যন্ত করতে হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিনে করোনার লক্ষণ নিয়ে কয়েকজনের মৃত্যু হলেও পরপর দুইদিন করোনা রোগী শনাক্ত না হওয়ার পর সোমবার একজনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে । সোমবার ১৩শ ৩৮ জনকে টেস্ট করে ৪৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার আরো ২ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে। যদিও করোনার উপসর্গ আছে এরকম অনেকেই অভিযোগ করছেন, টেস্ট করাতে চেয়েও আইইডিসিআরের সাড়া পাচ্ছেন না তারা। অনেকে বলছেন, আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহের জন্য তাৎক্ষণিক লোক পাঠানোর কথা বলে ২-৩ দিনেও পাঠায়নি এমন নজিরও রয়েছে।

আইইডিসিআরের একটি হিসেবেই এটি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। সোমবারের এক হিসাবে দেখা গেছে, করোনার লক্ষণ-উপসর্গের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৭২৫ জন আইইডিসিআর-এ কল করেছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৯৭টিই ছিলো করোনা সংক্রান্ত কল। তবে এই একই সময়ে মাত্র ১৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে প্রতিদিন কতসংখ্যক লোক ভাইরাসে সংক্রমিত কি না সেই টেস্টের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার সাধারণ ছুটির পর লাখ লাখ লোক ঢাকা ছেড়েছেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, গত ২৫শে মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৬৫ হাজার। অথচ ৫ দিনের ব্যবধানে ৩০শে মার্চে এসে সেই সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়। দেশটিতে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, দেশটির প্রায় সবগুলো অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো। অথচ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সীমিত আকারেই এই টেস্ট হচ্ছে। এর ফলে এখন বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ রোধে সঠিক পথে হাঁটছে কি না? যেখানে আমেরিকাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ ব্যাপকহারে করোনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করছে সেখানে বাংলাদেশে যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত সঠিক হচ্ছে কি না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাফল্য দেখছে সেসব দেশে কোথাও কাউকে সন্দেহ হলেই গণহারে টেস্ট করা হচ্ছে। এমনকি গোয়েন্দাগিরি করেও সন্দেভাজনকে টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখায় জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেশে প্রথমে শুধু বিদেশ ফেরত কিংবা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকলে টেস্ট করা হয়েছে। এখন এর আওতা বাড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব বয়সী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যাদের রয়েছে কিংবা যারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং এর কারণ নির্নয় করা যায়নি তাদেরকেও টেস্টের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসা, গণপরিবহন খাতের মতো পেশার সঙ্গে জড়িতদেরও করোনার উপসর্গ থাকলে টেস্টের আওতায় আনা হচ্ছে।

যারা এর বাইরে তাদের কোয়ারেন্টিনে থেকে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে। কিন্তু টেস্ট করানো হচ্ছে না।
এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এরকম অনেকেই জানাচ্ছেন, উপসর্গ থাকার পরও তাদের টেস্ট করানো হচ্ছে না। আবার অনেকেই টেস্টের জন্য হটলাইনেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। প্রতিদিন হটলাইনে হাজার হাজার কল আসলেও পরীক্ষা হচ্ছে অল্প সংখ্যায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ব্যাপক ভিত্তিতে টেস্ট করতে আইইডিসিআরের সক্ষমতার অভাব আছে? নাকি এতো টেস্টের প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে না?

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ অবশ্যই বাড়াতে হবে। এতো অল্প পরিমাণ পরীক্ষা করে দেশে করোনার বিস্তৃতি কতটা, তা বোঝা অসম্ভব। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে সন্দেহভাজন কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পর ফল পেয়ে বোঝা যাবে, করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি কী এবং এটি সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে কি না। করোনার লক্ষণ-উপসর্গ থাকা রোগীর মৃত্যু এবং করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কম হওয়ায় এ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা। প্রত্যেকেই বলছেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা অবশ্য-অবশ্যই বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। শনাক্ত করতে যত দেরি হবে, ততই তা পুরো দেশের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি ডেকে আনবে। তখন এই মহামারি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। আইইডিসিআরে গত ২২ ফেব্র“য়ারি থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্তকরণ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর পর থেকে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ১৩৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে মাত্র ৫১ জনের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ভেবে স্বস্তির অবকাশ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানো এবং সর্দিজ্বরসহ করোনায় চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতাল নির্মাণ করে সেবাদানের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে সন্দেহভাজন কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল পেলে বোঝা যাবে, এটি সমাজে বিস্তৃত হয়েছে কিনা। এ ছাড়া যাদের কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে, তাদের মেয়াদ শেষ হবে ৫ এপ্রিল। কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ও কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (সমাজ, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া) ওপর নির্ভর করছে সব কিছু। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকলে সামনের দিনগুলো খুবই ভয়াবহ হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বাড়াতেই হবে। পরীক্ষা করা না হলে কার দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে সেটি জানা গেল না। এতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি। এখন অনেক মানুষ গ্রামে অবস্থান করছেন, সে পর্যন্ত পরীক্ষা বিস্তৃত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

এদিকে করোনার লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা করে ওইসব ব্যক্তি করোনা সংক্রমণে মারা যায়নি বলে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এমনকি সেখনকার লকডাউনও খুলে দেয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার টেস্টে এই সংক্রমণ অনেক সময় ধরা পড়ে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী কমসংখ্যক শনাক্ত হলেও এটি সংক্রমণের দিক থেকে এখন তৃতীয় স্তরে রয়েছে। কারণ মহামারীর কারণে কোনো এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লকডাউন করা হলে সেটি তৃতীয় স্তর হিসেবে গণ্য হয়। আমাদের দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে আমি বলব- অবশ্যই আছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলেই বিদেশ ফেরতদের পরিবারের সদস্যের বাইরের মানুষও আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে। এমন একটি মৃত্যুর পর ওই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। করোনা বেশি ছড়িয়েছে কিনা সেটি জানতে হলে পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে। অল্প কিছু টেস্ট করে এটি নিশ্চিত হয়ে বসে থাকলে বিপদ আসন্ন। করোনার সংক্রমণ যাদের মধ্যে রয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে দেরি হলে এবং আক্রান্তদের আইসোলেশনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া না হলে সংক্রমণ ছড়াতেই থাকবে। পরবর্তীকালে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব আছে, তাদের শনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষার আওতায় আনা দরকার। এখন পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত সব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না। যাদের লক্ষণ-উপসর্গ মৃদু, তাদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ হয়। বাকি যেই ১৮ থেকে ২০ শতাংশ রোগী আছেন, তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সর্দিজ্বর, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট- এগুলো হচ্ছে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ। আমরা শুনেছি, হাসপাতালগুলোতে সর্দিজ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এখন আমাদের মূল কাজ হবে দুটি। একটি হলো- করোনার রোগী শনাক্ত করতে পরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করা; আর দ্বিতীয়টি হলো- যারা সর্দিজ্বরে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসার জন্য ডেটিকেটেড হাসপাতালের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেওয়া। ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্দিজ্বরের রোগীরা চিকিৎসা নিতে যাবেন এবং তাদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের টেস্ট করা হবে। তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হলে তাকে আইসোলেটেড করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি এ কাজ না করা হয়, সর্দিজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত কেউ থেকে থাকলে, তিনি নিজে সুস্থ হয়ে ফিরলেও তার মাধ্যমে আরও অনেকে আক্রান্ত হবেন। এতে করে করোনায় আক্রান্ত হওয়া অনেক রোগী অজ্ঞাতসারেই অন্যের সংস্পর্শে যাবেন এবং তাদের সংক্রমিত করবেন। সেসব সংক্রমিত মানুষ আবার অন্যদের সংক্রমিত করবেন। এভাবে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। এবং একসময় দেখা যাবে, অনেক মানুষই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের হয়তো হাসপাতালে যেতে হবে না। কিন্তু যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা যারা বয়স্ক বা যাদের ক্রমিক ডিজিজ আছে, তাদের হাসপাতালে নিতে হবে। তখন এত পরিমাণ রোগী হতে পারে, যার চাপ সামাল দেওয়া হয়তো অসম্ভব হয়ে যাবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে- ডেটিকেটেড হাসপাতাল করে সর্দিজ্বরের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার লক্ষণ-উপসর্গ থাকা রোগীদের অবশ্যই করোনা আক্রান্ত কিনা তা টেস্ট করা। অন্যথায় আমাদের সামনে হয়তো ভয়াবহ বিপদ।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আগামী এক-দুই সপ্তাহে বোঝা যাবে না। এটি কয়েক মাস পর্যন্ত বিস্তার ঘটাবে। এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। যদি বিষয়টি আমরা সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তো ভালো, তা হলে ধীরে ধীরে চলতে থাকবে। আর যদি আমাদের অলক্ষ্যে কোথাও কোনো মানুষ বিষয়গুলো না মানেন, আমাদের দুর্বলতা থাকে, তা হলে কোনো কোনো এলাকায় এটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটতে পারে। বিভিন্ন দেশে তা-ই দেখা গেছে। এখন আমাদের সন্তুষ্টির কোনো বিষয় নেই যে, আমাদের দেশে রোগী কম আছে। হাফ ছেড়ে বাঁচার অবকাশ নেই। মানুষ যদি নির্দ্বিধায় মেলামেশা করতে থাকে, তা হলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, মৃদু সংক্রমণ লক্ষণযুক্ত করোনার রোগী যদি থাকে, তা হলে তিনি হয়তো টেরই পাবেন না। হয়তো এমনি ভালো হয়ে যাবেন, হাসপাতালেও যেতে হবে না। কিন্তু তিনি যেসব মানুষের সঙ্গে মিশবেন, তারা এবং তাদের মাধ্যমে অন্য অনেকেই সংক্রমিত হবেন। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে একসঙ্গে অনেক রোগী শনাক্ত হতে পারেন। তখন খুবই জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি কখনই মনে করা যাবে না যে, আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি।

ডা. মুশতাক বলেন, বাংলাদেশে এ মহামারী প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। সবাই যদি সতর্ক না হই, কোয়ারেন্টিন মেনে না চলি, শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখি, অযথা মিক্সিং পরিহার না করি- তা হলে সামনের দিন খুবই কঠিন হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমনটিই দেখা গেছে। যদি আমরা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইন্টারভেশন মেনে চলি, তা হলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি বলেছেন, শীতপ্রধান দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বেশি ঝুঁকিতে, আমরা গরমের দেশ বলে ঝুঁকি কম। কিন্তু এই তত্তে¡র কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক মেডিসিনের (রেসপিরেটরি ও আইসিইউ) সহযোগী অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান। দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক। তাই অল্প সময়ে বেঁচে থাকার সামান্য সুযোগ পেলেই এরা মানবদেহকে সংক্রমিত করে ফেলে। মানবদেহে ঢোকার পরে তারা একই তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে। কারণ, সব আবহাওয়ায় মানবদেহের তাপমাত্রা সমান। তাই গরম বলেই এটা বাড়বে না, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরম মিয়ামিতে। প্রায় একই রকম লুইজিয়ানায়। এই এলাকা দুটি যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ানকভাবে আক্রান্ত এলাকাগুলোর অন্যতম। সিঙ্গাপুরও ঠান্ডার দেশ নয়। মিয়ামিতে সোমবার ১ হাজার ব্যক্তির পজিটিভ ফল এসেছে।

বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে হারে পরীক্ষা চলছে, তাকে নিতান্ত অপ্রতুল বলেও বোঝানো যাবে না। এটা সিন্ধুতে এক বিন্দু পানি ফেলার চেয়েও কম। পরীক্ষার বিষয়টি কেবল সরকার সামলাতে পারবে না। তার একার হাতে রাখাও ঠিক হচ্ছে না। লকডাউন করতে গিয়ে বাংলাদেশ একটি গুরুতর ভুল করেছে। শহর ছিল বাংলাদেশের জন্য হটস্পট। গ্রামে এটা ধরা পড়েনি। শহর থেকে দলে দলে মানুষকে ছড়িয়ে পড়তে দিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বিস্তৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০০ জন নয়, প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ব্যক্তির টেস্ট করাতে হবে।দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ এটা করে দেখিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি খাতের ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারকে বসতে হবে। তাদের সব রকম সাহায্য দিতে হবে। তারা পারবে। দেশে যদি অনতিবিলম্বে ১০টি ল্যাবে একসঙ্গে প্রতিদিন ১০০ জনের টেস্ট শুরু করে, তাহলে সহজেই প্রতিদিনের টেস্ট সংখ্যা এক হাজারে উন্নীত করা সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বেসরকারি ল্যাবগুলোর এই ক্যাপাসিটি আছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন সবাই বেসরকারি খাতের সহায়তায় টেস্টিং ক্যাপাসিটি বাড়িয়েছে।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print