ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

অভাবের তাড়নায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অসুস্থতার জন্য কোনো কাজ করতে না পেরে অভাবের তাড়নায় গাছে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন আবু তাহের (৪০) নামে এক ব্যক্তি। ‘শান্তিপূর্ণ ভূমি ছাতির চর’ নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আবেগঘন পোস্ট দেওয়ার ৪০ মিনিট পর গতকাল সোমবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আত্মহত্যা করেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে। আবু তাহের স্ত্রী ও দুই মেয়ে সন্তান রেখে গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নিকলী থানার অফিসার ইনর্চাজ শামসুল আলম সিদ্দিকী জানান, নিকলী থানার পুলিশ মৃতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদরে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় নিকলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।

আত্মহত্যার আগে ছাতিরচরের চাচাতো বোন ও এলাকাবাসীকে উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘শান্তিপূর্ণ ভূমি ছাতির চর’ নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন আবু আহের। তার পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

.

‘আমার মতো অকর্মার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নাই। কাজ করিতে না পারলে আসমান থেকে খাবার আসার কোনো সিস্টেম নাই। দুনিয়াতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অনেকগুলো পথ খোলা থাকে। যখন সবগুলো পথই বন্ধ হয়ে যায় তখনই মানুষ এই ধরনের গর্হিত কাজ করে।

আমি আরও অনেক দূরে গিয়ে মরতাম। এমন জায়গায় যেতাম কেউ কোনদিন আমার লাশও খুঁজে পেতো না। দূরে গেলে বাড়ির মানুষ খোঁজাখুঁজি করে হয়রানির শিকার হতো আর টাকাপয়সা নষ্ট করতো।

আমার অসুখ হওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। পরিশ্রমের কোনো কাজ করতে পারতাম না। সহজ কাজ হলে করতে পারতাম। বসে কাজ বা কিছুটা হাঁটাহাঁটি করে কাজ হলে করতে পারতাম।

এমনিতেই কাজ করতে পারি না তার ওপরে আবার মানসিক অসুখ। একটুখানি কাজ করলেই হাতসহ শরীর কাঁপতে শুরু করে। যখনই শরীরটা কাঁপতে শুরু করে তখনই আমি মানসিক এবং শারীরিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ি।

আমার বড় ভাই আমাকে বলেছিল চেষ্টা করলেই সব কাজ করা যায়। আমি সেই কথা মাথায় রেখে অনেক কাজ বহুবার করার চেষ্টা করেছি। পারি নাই। তো আর কি করব। আমার আর কোনকিছু করার নেই। দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। কাজ ছাড়া বাচাঁর কোনো উপায় নেই।

অসুস্থতার জন্য আমার কাছে কোন মূলধন ছিল না। কয়েকজনকে বললাম আমাকে কিছু টাকা ধার হিসাবে দাও- একটি দোকানে দেব। পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দেব। না পেলাম না। মৃত্যুর আগে কেউ মিথ্যা কথা বলতে পারি না। কাজ যেটাই করতাম সততার সাথে করতাম এবং কেউ যদি আমাকে মূলধন দিয়ে একটি দোকান করার সহযোগিতা করতো তাহলে দোকানের লাভ দিয়ে তার টাকা পাই টু পাই তাকে বুঝিয়া দিতাম। এবং সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতাম। তারা মনে করতো, আমার তো কোনকিছুই নাই যদি টাকা ফেরত দিতে না পারি। কারও টাকা মেরে দেওয়া বা কারও সাথে প্রতারণা করা আমার চরিত্রে ছিল না।

আমার স্বভাবের মধ্যে একটা নেগেটিভ দিক ছিল তাড়াতাড়ি কারও সাথে মিশতে পারতাম না। মানসুরাকে দেখাশোনা করার জন্য খুকীর মা আছে এবং আমি আমার বড় ভাইকে ও মেহেদী হাসানের মাকে অনুরোধ করে যাইতেছি যে তারা যেন মানসুরাকে একটু দেখাশোনা করে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমিই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।

আমার ছালে ফুফুকে বলে দিও তার লুলা মামু চলে গেছে। আর খুকীর মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমাকে আমি কষ্ট ছাড়া আর কোনকিছুই দিতে পারলাম না।

নিকৃষ্ট কাজের মধ্যে একটা কাজ হলো- কারও কাছে কোনো কিছুর প্রতিদান চাওয়া। হে ফাতেমা আর শামীমা তোদেরকে বলছি। তোদের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল স্বচ্ছ পানির মতো নিখুঁত পরিষ্কার। একজন পিতা তার সন্তানকে যেমন ভালোবাসে ঠিক তদ্রূপ আমি তোদেরকে এমন ভালোবাসতাম। হয়তো তোদেরকে আমি কোনদিন কোনো কিছু দিতে পারি নাই। কারণ অসুস্থতার জন্য কোনদিন ঘুরে ফিরে দাঁড়াতে পারি নাই।

এখন এখানে দুটা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথম প্রশ্ন – তোরা ছাড়া আমার আরও অনেকগুলো চাচাতো বোন আছে। তাদের প্রতি আমার এত ভালোবাসা নাই কেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন -তোরা আমার চাচাতো বোন। তোরা ছাড়া আমার আপন ছোট দুই বোন আছে। আপন বোনের চেয়ে চাচাতো বোনের প্রতি এত ভালোবাসা কেন?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর-আমার অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ করিতে না পারায় আমি অনেকদিন বাড়িতে ছিলাম তোদের সাথে। তখন বাড়িতে আমার অন্যান্য কোনো চাচাতো বোন ছিল না। তোদের সাথেই আমার ওঠাবসা বেশি হয়েছে। আমার যখন রোগটি উঠত আমি কোনো কিছু বলার আগেই তোদের হাতের ছোঁয়া আমার শরীরে অনুভূতি পাইতাম। রোগ উঠিলে কথাও বলতে পারতাম না। তোরা আমার মনের ভাষা বুঝতি। তখন আমাকে কিভাবে সেবা করতে হইবে তা তোরা নিজের মতো করে করতি। তাই তোদের প্রতি আমার মনের ভেতরে আলাদা একটা ভালোবাসা কিভাবে জন্ম নিয়েছে আমি নিজেও টের পাইনি।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর-আমার আপন ছোট দুই বোন আছে। তারা আমার বয়সে প্রায় পিঠেপিঠি। পিঠেপিঠি হওয়ার কারণে খুনসুটি হয়েছে বেশি। খুনসুটির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোনকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় তা অনুভূত হওয়ার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে এবং আমি নিজেও কাজের সুবাদে অন্যত্র থাকতাম। আর তোদের সাথে আমার বয়সের অনেক পার্থক্য। তাই তোদের জন্য আমার আলাদা একটা টান ছিল। আজ আমি তোদের কাছ থেকে আমার ভালোবাসার প্রতিদান চাই। আমি আমার দুজন সন্তান রেখে গেলাম। তাদেরকে একটু ভালোবাসা দিস।

ছাতিরচরবাসী সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমার এ ছাড়া আর কোনো কিছু করার ছিল না।’

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print