
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সফল মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি বলেছেন, ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি এই চট্টগ্রামে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছিল। সেদিন তিনি নেতা-কর্মীদের প্রতিরক্ষা দেয়ায় রক্ষা পেয়েছিলেন। এরপর তাঁকে ২৪ বার হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বাংলার জনগণ ও জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তা প্রতিহত করেছেন।
তিনি আজ রবিবার সকালে আদালত ভবনের সম্মুখে শহীদবেদী চত্বরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে ২৪ জানুয়ারির গণহত্যার বিচার জাতি পায়নি। আমি আশাবাদি, দেশে আইনের শাসন চলছে। আইন মোতাবেক বিচার হবেই। চট্টগ্রাম গণহত্যার নির্দেশদাতারা গণদুশমন। দীর্ঘ ৩১টি বছর পেরিয়ে গেলেও এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মামলাটি আজও নিষ্পত্তি হয়নি। এই হত্যাকান্ডের বিচারে দোষীদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, আর যাতে কোন দলীয় উচ্চ রাজনৈতিক সমাবেশে ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড না ঘটে, সুস্থ মননের চর্চা যাতে রাজনীতিতে চালু হয় সেজন্য এই হত্যাকান্ডের যথাযথ বিচার আজ সময়ের দাবি।
তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সংকল্প আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়যুক্ত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মনজয় করতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন বলেছেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানাই ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিষ্পত্তি হোক। এই বিচার প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দিচ্ছেন তাদেরও সনাক্ত করে ন্যায় বিচার করুন।

মোশাররফ বলেন, তৎকালীন সময়ে যারা স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়ে চট্টগ্রামে ছিলেন তারা এই মঞ্চে উপস্থিত আছেন সেই ত্যাগী সাবেক ছাত্র ও যুব নেতাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা আমাদের রাজনৈতিক লড়াইয়ে পাথেয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এম.পি বলেন, ‘জনগণের দুশমন স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো ক্ষমতায় আসতে পারে না। এরা পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। এরা দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।বাংলাদেশ এখন শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। এই অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এম.রেজাউল করিম চৌধুরীর নৌকা প্রতীকের বিজয়ের কোন বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘যারা বাংলা ও বাঙালিকে অস্বীকার করে তারা জাতি ও মানবতার শত্রু। বিবেকহীন এই পাষণ্ডদের শাস্তি পেতেই হবে। তবে এই মুহূর্তে বিভেদ আর নয়, ঐক্যই আমাদের শক্তি। এই সত্যকে উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে চট্টলবাসীকে সাথে নিয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন ২৪ জানুয়ারির গণহত্যা ছিল সুপরিকল্পিত। সেদিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে স্বৈরশাসন চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারে নি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে একাত্তরের চেতনায় ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয় করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই স্মরণানুষ্ঠানে আইন সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, দক্ষিণ জেলার প্রদীপ কুমার দাশ, মহানগর আওযামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, বাণিজ্য সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, দক্ষিণ জেলার আবু জাফর, খোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল মনসুর, বখতিয়ার উদ্দিন খান, মহব্বত আলী খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, থানা আওয়ামী লীগের হাজী ছিদ্দিক আলম, সাহাব উদ্দিন আহমেদ, আনছারুল হক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জানে আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য- ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারী চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন এক রায়ে ৫ পুলিশকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কোতোয়ালী থানার তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (মামলার বিচার শুরুর পর থেকে পলাতক), সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মো. আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।