ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

৩১ বছর পরও যে দু:সহ স্মৃতি কাঁদায়

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এ দিনে কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্যোগ। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস তছনছ করে দিয়েছিল উপকূলের জনপদ। মৃত্যু হয়েছিল কয়েক লাখ মানুষের। ভেসে গিয়েছিল খেতের ফসল, লাখ লাখ গবাদি পশু। সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফসহ আট উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী-আনোয়ারাসহ উপকূলের হাজার হাজার গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিল ৩০ বছরে পা রাখলেও সামগ্রিক ঝুঁকিমুক্ত হয়নি উপকূলীয় জনপদ।

এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। দুঃসহ সে স্মৃতি এখনো কাঁদায় স্বজনহারা মানুষগুলোকে। আজ থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূল দিয়ে দুঃস্বপ্নের মতো বয়ে গিয়েছিল এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। ২৯ এপ্রিলের সেই ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে নিয়ে আবারও উপকূলীয় মানুষের কাছে দিনটি ফিরে এসেছে।

.

 ২৯ এপ্রিলের মধ্যরাতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল কক্সবাজারে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়া-টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা। এছাড়া লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলার শত শত ইউনিয়ন। ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয়েছিল বিরাণভূমিতে। ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় প্রায় একলাখ ৬০ হাজার মানুষ। যদিও সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল একলাখ ৩৮ হাজার। সম্পদহানি হয়েছিল চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় ৬০ লাখ মানুষ।

.

ঘূর্ণিঝড়ের পর সামর্থ্যবান মানুষ দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে আঘাতহানা প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সীতাকুণ্ডের সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন। প্রায় ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ও ৩০-৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল পরিণত হয়েছিল বিরাণ ভূমিতে। এসময় মারা গিয়েছিল এলাকার প্রায় সাত হাজার মানুষ। আর নিখোঁজ হয়েছিল প্রায় তিন হাজার শিশু-নারী-পুরুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় তিনশত কোটি টাকার সম্পদ। ভয়াল সেই রাতের ৩০টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উপকূলের আংশিক বেড়িবাঁধ সংস্কার হলেও এখনো এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারিসহ উপকূলীয় এলাকায় গত ৩০ বছরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে কয়েক’শ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁশবাড়িয়ার বোয়ালিয়াকূল বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন পর সংস্কার হলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক বছর না যেতেই বাঁধটি পুনরায় ভাঙ্গতে শুরু করেছে।

অপরদিকে কক্সবাজারে মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বর্তমানে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে মারাত্মক দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করছে। এখানে অধিকাংশ বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। সব ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হচ্ছে না। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকায় প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করায় যে কোনোসময় ঘূর্ণিঝড় হলে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও বেশি ভয়াবহ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিরাপদ জীবন যাপনের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক কক্সবাজারে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় ঝাউ ও নারিকেল চারা রোপণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় উখিয়া-টেকনাফ উপকূলে সৃজিত ঝাউবাগান পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও এখন সেই পরিবেশ আর নেই। বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার ঝাউবাগান দখল করে বসবাস করছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই রোহিঙ্গা নাগরিক। এসব রোহিঙ্গা নির্বিচারে ঝাউগাছ কর্তনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ফলে উপকূলীয় এলাকা ফের অরক্ষিত হয়ে পড়ে।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর জেলায় ৪৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে প্রায় অধিকাংশ সাইক্লোন শেল্টার সমুদ্রে তলিয়ে যায়। অর্ধশতাধিক সাইক্লোন শেল্টার বেদখল হয় এবং ২০টি নির্মাণজনিত ত্রুটির ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. ইদ্রিস আলম বলেন, উপকূল বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল রাতে সন্দ্বীপে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

আজ স্বজনহারা বেদনা ও হতাশ হৃদয় নিয়ে তাদেরকে স্মরণ করতে হচ্ছে।  উপকূলের মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। চারপাশে বসবাস এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলাকায় বাইরের অঞ্চলগুলিতে বাস করার জন্য সরকার ও এনজিওদের আরও কাজ করা উচিত। বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অব্যাহত থাকা উচিত।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print