
বহুল প্রতিক্ষীত চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ দক্ষিণ প্রান্তের টিউবের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, উত্তর টিউবের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জানুয়ারী থেকে চলবে যানবাহন
এ অবস্থায় আগামীকাল (২৬ নেভম্বর) শনিবার সকাল ১০টায় সেতু বিভাগের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ প্রান্তের সুড়ঙ্গ নির্মাণকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।
আজ শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম টিউবের কাজের সমাপ্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। এ টানেল দিয়ে আগামী জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে যান চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্ত হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে টিউব উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি টানেলস্থলেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরও জানান, এখনো টানেলের কাজ পুরো শেষ হয়নি। পুরো কাজ সম্পন্ন করার জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তারপরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে টানেল।
জানাগেছে, মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক তিন পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক তিন দুই কিলোমিটার।
এখন পর্যন্ত টানেল নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। শতভাগ কাজ শেষ হতে ডিসেমবর পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ।

প্রসঙ্গত, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নদীর তলদেশে নির্মিত এটিই প্রথম টানেল।
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমান সরকার।
দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়।এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়েছে দুটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা।
পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলীর অপর প্রান্তে আনোয়ারা পর্যন্ত দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। নদীর এক প্রান্ত থেকে টানেলের ভেতর দিয়ে অপর প্রান্তে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ৬ মিনিট সময় লাগতে পারে বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।